কম বৃষ্টি হওয়া, তেল খরচ বৃদ্ধির কারণে বগুড়ায় আমন চাষে খরচ বেড়েছে। বিঘা প্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে খরচ বেড়েছে চাষিদের। আমন চাষিরা বলছেন, চাষেই খরচ বাড়ছে ফলনের পর ধানের দাম না বাড়লে কৃষকের মাথায় হাত পড়বে। ‘সার, সেচ আর হাল চাষের মূল্য’ সব মিলিয়ে এবার চলতি আমন মৌসুমে বগুড়ায় কৃষকের ওপর বাড়তি খরচের চাপ।
জানা গেছে, মৌসুম অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ বৃষ্টির মাস। তবে এবার বৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে ছন্দপতন ঘটেছে। কাঙ্কিত বৃষ্টি না পাওয়ায় বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় নলক‚পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে মাঠে চারা রোপণ শুরু করেছেন কৃষকরা। এই অবস্থায় হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি বাড়ানো হয়েছে ছয় টাকা। সেই সাথে ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। এতে খরচ বাড়বে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষে। ফলে এবার আমন চাষে বিঘা প্রতি প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ গুণতে হবে কৃষকদের। এ কারনে বিগত বছরের চেয়ে এবার আমন চাষে অতিরিক্ত খরচ গুণতে হবে কৃষকদের।
বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলার সান্তাহার ইউপির কায়েত পাড়া গ্রামের কৃষক ফিরোজ কবির জানান, তিনি বিগত আমন মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে চাষের জন্য নিতেন ১৮০ টাকা (একচাষ)। হঠাৎ ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা হওয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে হাল চাষের দাম বাড়ানোর সীদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে যেসব জমি চাষ করবেন তাদের প্রতিবিঘায় এক চাষের মূল্য ২৫০ টাকা নির্ধারন করেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এবার আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইউরিয়া সার ৩০ কেজি ৬৬০-৬৮০ টাকা, পটাশ ১৫ কেজি ৩৬০, ফসফেট ১৫ কেজি ৪২০, জিপসাম ১০ কেজি ২২০ টাকা। এছাড়া শ্রমিক, হালচাষ ও চারা রোপণ করতে ৩ হাজার ২শ টাকা এবং সেচ খরচ হবে ১ হাজার টাকা। বিগত মৌসুমগুলোতে এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ এবার সার, সেচ ও হালচাষ খরচে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো।
আদমদিঘি উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের কৃষক ইসরাইল হোসেন জানান, প্রকৃতির বিরূপ আচরণে এবার বেশির ভাগ কৃষক সেচ নির্ভর হয়েছেন। এতে সেচের জন্য বাড়তি খরচ গুণতে হবে। সঙ্গে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, আবার শ্রমিক সংকটও ভোগাচ্ছে। এখন নতুন করে ডিজেল তেল ও ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন মিলে প্রায় ১২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জমি চাষের ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বিক্রেতারা যেন কোনো ভাবেই অতিরিক্ত মূল্য না নিতে পারে এজন্য নজরদারি রয়েছে। যদি কেউ সারের দাম বেশি নেয় তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ