রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন (রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল) কাজ শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন। এ অনুষ্ঠানে রাশিয়ার পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সান্ডার লেখসেভ উপস্থিত থাকবেন বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি হবে। প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন শুরু হচ্ছে। যা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি বড় অর্জন বলে মনে করছেন রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়, দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন কার্যক্রমকে ঘিরে প্রকল্প এলাকায় শেষ মুহূর্তে সাজসজ্জার কাজ চলছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বড় বড় বিলবোর্ড প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধন হয়। ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের কাজের ৭০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের এক বছরের মধ্যেই দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষের দিকে প্রথম ইউনিটে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হলেই উৎপাদন শুরু করা যাবে না। পারমাণবিক প্রকল্পের উৎপাদন শুরু করতে প্রকল্প এলাকার আনুষঙ্গিক সব ধরনের নির্মাণ কাজ শেষ হতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত মূল প্রকল্পের বাইরের অন্যান্য অবকাঠামোগত নির্মাণ শেষ হওয়া এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ম ও আইন মেনে উৎপাদনে যেতে হয়, ফলে উৎপাদন শুরু হওয়ার সঙ্গে বিভিন্ন অর্গান জড়িত বলেও দাবি তাদের।
প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৫৩ শতাংশ ভৌত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং আর্থিক আগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে উৎপাদন শুরুর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়ার অর্থায়ন, ডিজাইন ও কারিগরি সহায়তায় ভিভিআর-১২০০ মডেলের দুটি পারমানবিক চুল্লি স্থাপন হবে। ২০১৭ সালে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটে রিয়েক্টর বসবে বুধবার। রূপপুরে ফুকুশিমার মতো কিছু হলেও দুর্ঘটনা ঘটবে না। কোর ক্যাচার থাকায় গ্যাস ফেটে বের হবে না। এই প্রজেক্ট শুধু ইলেকট্রিসিটির নয়, পুরো জাতিকে আলোকিত করার মত একটি বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
মন্ত্রী জানান, ফুকুশিমার পর কোরক্যাচার টেকনোলজি যুক্ত করা হয় রূপপুরে। এটি না করলে অনেক খরচ কম হতো, আমরা অনেক খরচ করে কোরক্যাচার বসিয়েছি শুধু জনগণের নিরাপত্তার কথা ভেবে। নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনটি প্রথম শ্রেণি না থাকলে এখানে কোনো প্রকৌশলীকে নিয়োগ করা হয়নি। কোনো ঘুষ ছাড়া ১০ হাজার লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের ছেলেগুলো শূন্য থেকে দেখছে, দক্ষ হয়ে উঠছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল