কুষ্টিয়ার খোকসার মালি গ্রামের গৃহবধূ মিনার (২০) মরদেহ হাসপাতালে রেখে স্বামী-শাশুড়ি পালিয়ে গেলেন! ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নিহতের বাবার।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের মালিগ্রাম অনলাইন মোড়ে নিজের শোবার ঘর থেকে গৃহবধূ মিনাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকেরা। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক গৃহবধূকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবহিত করে। এর ফাঁকে মৃত গৃহবধূকে হাসপাতালের সিঁড়ির নিচে রেখে স্বামী শামীম রেজা ও শাশুড়ি সুফিয়াসহ অন্য লোকেরা পালিয়ে যান। নিহত গৃহবধূর দুই বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত গৃহবধূর বাবা আব্দুল মজিদ অভিযোগ করে বলেন, দুপুর ১২টার পর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারেন তুচ্ছ পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার সূত্র ধরে মিনাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্বামী শামীম ও তার পরিবারের লোকেরা নিহত মেয়ের মৃতদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। তার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি মেয়ের হত্যাকারীদের বিচারের দাবি করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পারিবারিকভাবে ৫ বছার আগে মিনার বিয়ে দেওয়া হয়। সাথে যৌতুকও দেওয়া হয়। কিন্তু অল্প কয়েক মাসের মধ্যে আরো যৌতুকের দাবিতে মিনার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। সম্প্রতি মিনাকে বাবার বাড়ি শৈলকূপা থানার সারুটিয়া গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ৩-৪ মাস আগে দুই পরিবারের সমঝোতার ভিত্তিতে মিনাকে স্বামীর বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
গৃহবধূর স্বামী ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সোমবার বিকালে মালিগ্রামে যাওয়া হয়। বাড়ির সব ঘর গুলো তালা দিয়ে উঠানের মাঝে বসে বিলাপ করছেন গৃহবধূর শাশুড়ি সুফিয়া বেগম। নিহতের স্বামী শামীম রেজা ভাঙা পায়ের চিকিৎসার ধুয়া তুলে আত্ম গোপনে রয়েছেন। নিহতের দুই বছর বয়সের শিশু শাম্মিকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
সুফিয়া বেগম জানান, ইলেকট্রিক জাগে পানি গরম করা নিয়ে শামীমের সাথে মিনার কথাকাটি হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে মিনা তার শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। পরে ভিন্ন রাস্তায় ঘরে ঢুকে গৃহবধূ মিনাকে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। লাশ ফেলে পালিয়ে যাওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, মিনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে শামীমের একটি পা ভেঙে যায়। ছেলের চিকিৎসার জন্য তারা বাড়ি ফিরে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ট্রফি কুন্ডু জানান, গৃহবধূকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তবে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছিলেন গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
হাসপাতালে উপস্থিত খোকসা থানার এসআই বিপুল জানান, নিহত গৃহবধূর গলায় দড়ির দাগ রয়েছে। তবে শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের তেমন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে গৃহবধূর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ