পাবনার ঈশ্বরদীর উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। সোমবার বিকাল ৩টায় ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের হিসাবে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতরে থাকলে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যের তাপমাত্রাকে ধরা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ হিসেবে। আর ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে তা তীব্র তাপপ্রবাহ।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক বলেন, ঈশ্বরদীতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। বিকাল ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ঈশ্বরদীতে ১৪ এপ্রিল তাপমাত্রা সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, তাপ প্রবাহের কারণে সূর্য ওঠার পরই উপজেলার পথঘাট তেতে উঠছে। পদ্মার ধু ধু বালুচরের দিক থেকে বয়ে আসছে তপ্ত হাওয়া। এমন আবহাওয়ায় সহজেই ক্লান্ত হয়ে উঠছেন মানুষ। প্রখর রোদ মাথায় নিয়ে মাঠে কাজ করছেন কৃষকেরা। অন্যদিকে এই উত্তাপের মধ্যেও ঈদের বাজারের দিকে ছুটছে মানুষ। তবে গরমের কারণে কেনাকাটা করে স্বস্তি পাচ্ছেন না কেউ কেউ।
ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের স্টেশন রোডে কাজ করছিলেন কয়েক শ্রমিক। দুপুর ১টার দিকে কাজের এক পর্যায়ে তারা রাস্তায় পৌরসভার লাইনের একটি পাইপে হাতমুখ ধুচ্ছিলেন। প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে হাতমুখে পানি দিচ্ছেন বলে জানান আল আমিন। তিনি বলেন, প্রচণ্ড রোদের কারণে সব শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি পান করারও উপায় নেই রোজা থাকার কারণে। তবু পেটের তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে।
পাবনা শহরে মাথায় ছাতা বেঁধে ভ্যানে করে কাপড় ফেরি করে বিক্রি করছিলেন রিয়াদ হোসেন। শহরের রাধানগর এলাকায় তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, খুব রোদ উঠেছে। ফেরি করার সময় মাঝেমধ্যে ক্রেতা পেলে গাছতলায় জিরিয়ে নেন, বিক্রিও কম।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দীন বলেন, আজ টানা ১৫ দিনের মতো এ অফিসের আওতাধীন এলাকাসমূহে কখনো দেশের সর্বোচ্চ আবার কখনো দ্বিতীয় স্থানের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, সহজে দেখা মিলছে না বৃষ্টির। এবারের গরমে ভিন্নমাত্রা রয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই তাপদাহের মধ্যে ঠোট শুকিয়ে ও ফেটে যাচ্ছে। বাতাসের জ্বলীয়বাষ্প কম থাকায় মূলত এমন হচ্ছে।
সকালে সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে রোদ তীব্র হচ্ছে, আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুনঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।
টানা তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষের। তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন। হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রখর রোদের কারণে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, ঠেলা ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। তীব্র তাপদাহের কারণে অনেককে অলস সময়ও পার করতে দেখা গেছে। রাস্তায় লোকজন চলাচলেও কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে। আবার অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হয়েছেন, কষ্টও বেড়েছে রোজাদারদেরও।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসমা খান জানান, তীব্র খরতাপে কেনাকাটা করতে আসা নারীদের অনেক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তো তাপদাহে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন। এ অবস্থায় বেশি বেশি ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর ভিজিয়ে রাখা এবং বেশি বেশি তরল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার বলেও জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত