অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে সবগুলো নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে দুধকুমার নদ ও তিস্তা নদীর পানি। স্থানীয় পাউবো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ১০ সে. মি. নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেইসাথে ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে, পানি বৃদ্ধির ফলে নদনদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানি প্রবেশ করেছে চর ও দ্বীপচর সমূহে। এতে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার। বন্যার পানিতে পটল, ঢেড়শ, ঝিঙে ও পাটখেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ফলে নদী পাড়ের কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, আগামী এক সপ্তাহ ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতলে বৃদ্ধি পাবে। ফলে ২২-২৩ জুন নদের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ও বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন এবং চিলমারীর নয়ারহাট ইউনিয়নসহ চরাঞ্চল সাময়িক প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, দুধকুমর নদের পানি বেড়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নে এবং নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ফান্দেরচর গ্রামে পানি প্রবেশ করায় সেখানে অর্ধশতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ওই এলাকায় পানিতে তলিয়ে কাচা রাস্তা।
অন্যদিকে, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির ফলে সদরের যাত্রাপুর ও পাঁচগাছী ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন এবং রাজারহাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এদিকে, নদনদীর পানি বাড়ায় নদী ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হয়েছে চিলমারী উপজেলার দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজটি। এছাড়াও সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ভাঙনে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদ-নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে বন্যা ও ভাঙন আতংক বিরাজ করছে।
গত সোমবার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো: সাঈদুল আরীফ। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো: সাঈদুল আরীফ জানান, এখনও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি রেখেছি। ৫৪১ মে. টন চাল, ভিজিডির চাল যা বিতরণ চলছে, নগদ ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা ও অতিরিক্ত ৮শ মে. টন চাল মওজুদ রয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এখন নদনদীর ২৬টি পয়েন্টে নদী ভাঙন চলছে। তবে বন্যার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলায় বড় ধরনের বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। কিন্তু নদনদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এএ