সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্বরসতী পুজাকে ঘিরে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য দই ও চিড়া মুড়ি-মুরকির মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাড়াশের ঈদগাহ মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলায় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও নাটোর থেকে ঘোষেরা ক্ষীরসা দই, শাহী দই, টক দই, শ্রীপুরী দইসহ বাহারি নাম ও স্বাদের দই এবং চিড়া-মুরি মুকরির পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
অতিথিদের আপন্যায়ন করতে মেলায় দইসহ মুড়ি মুরকি কিনতে ভীড় করছে ক্রেতারা। মেলায় বেচাকেনাও ভাল হচ্ছে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে জেলা শহরের মুজিব সড়কে দই মেলায় বসেছে।
তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা.গোপাল চন্দ্র ঘোষ জানান, প্রায় আড়াইশ বছর পুর্বে তাড়াশের জমিদার বনওয়ারি লাল রায় বাহাদুর ভারত বর্ষের বিভিন্ন সাধু ও বৈষ্যদের তাড়াশের রাধাগোবিন্দ নাটমন্দির পরিদর্শনের জন্য নিমন্ত্রন করেন। জমিদারী প্রথা অনুসরন করে জমিদার বনওয়ারি লাল রায় বাহাদুর অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য দই, চিড়, মুরি-মুরকির ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে প্রতিবছর মেলার প্রচলন শুরু হয়। প্রতিবছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে বিকিকিনি করতেন। কথিত আছে সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দই মেলা এখনো মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বার্ষিক রওয়াজ পরিণত হয়েছে। দইয়ের মেলায় দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এমন হরেক নামে দামের হেরফেরে বিক্রি হয়। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর সিরাজগঞ্জের রাজাপুরের দই তাড়াশের দই প্রচুর বেচাকেনা হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তপন গোস্বামী বলেন, খাঁটি দুধের সম্ভার খ্যাত সিরাজগঞ্জবাসী প্রাচীন আমল হতেই রসনা বিলাসী আর অতিথি পরায়ণ। দইয়ের মেলাটি জেলার আদি ঐতিহ্যের অংশ। স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হলেও বর্তমানে হিন্দু-মুসলিম সব শ্রেনীর পেশার মানুষ মেলায় আসেন এবং দইসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি কিনে নিয়ে যান।
দই বিক্রেতা উজ্জ্বল ঘোষ জানান, দই মেলা উপলক্ষে এবার ৫০ মণ দই আনা হয়েছে। প্রায় সব দই বিক্রি হয়েছে। গুরুদাসপুরের চান্দু মিয়া বলেন, এবার ৩০মন দই নিয়ে এসেছিলাম।সব বিক্রি হয়েছে। মাধাইনগরের মিলন ঘোষ বলেন আমি ৩৫মন দই মেলায় বিক্রি করেছি। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, দুধ, চিনি,ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরা ছোট এবং দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
ক্রেতা সুমন দাস বলেন, সরস্বতী পুজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলা হয়। প্রতিবছর দই মেলায় আত্মীয়-স্বজনদের জন্য দই কিনে থাকি। এ বছরও কিনলাম। ক্রেতা দেবা বিশ্বাস বলেন, সরস্বতী পুজা উপলক্ষে বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছে। তাদের আপ্যায়নে দই কিনলাম। ক্রেতা সঞ্জয় সাহা বলেন, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বোন ও জামাইসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন বাড়ীতে এসেছে। এখানকার দই খুব সুস্বাদু। প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ কেজি দই কিনে থাকি। তবে এবার দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সনাতন কুমার দাস বলেন, ঐতিহ্য মেনে তাড়াশে দই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগে মেলায় মানুষের ভিড় বেশি থাকায় ঢোকাই যেত না। এ বছরও প্রচুর ক্রেতা মেলায় ভিড় করছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়ক ও তাড়াশে আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দই মেলার উৎসব হচ্ছে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যুগযুগ ধরে চলে আসা এই মেলা আগামীতে আরও প্রসারিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম