স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের সত্যতা না পাওয়ায় বগুড়ার ধুনট থানার সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মামলার প্রধান অভিযুক্ত ধুনটের জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মুরাদুজ্জামান ওরফে মুকুলকে (৪৯) একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত রবিবার জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুমিন হাসানের আদালতে পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজ আলী এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে মামলার বাদী ও স্কুলছাত্রীর মা পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়ে আদালতে পুন:তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয় কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামান ২০২১ সালে ধুনটের গ্রামে বাসা ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকতেন। বাড়ির মালিকের মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ত। ওই ছাত্রীর মা-বাবা কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় কর্মস্থলে থাকতেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রীও কর্মসূত্রে দিনের বেলা বাহিরে থাকতেন। এই সুযোগে মুরাদুজ্জামান কৌশলে স্কুলছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে মুঠোফোনে ছবি তোলেন। পরে ওই ছবি দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। ২০২২ সালের ১২ মে আবার ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী চিৎকার দেয়। তখন স্বজনরা ছুটে এলে মুরাদুজ্জামান পালিয়ে যান। এরপর ওই ছাত্রীর কিছু অশালীন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে মুরাদুজ্জামান গ্রেফতার হন। তখন তার মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
পিবিআই সূত্র জানায়, আলোচিত ধর্ষণ মামলার শুরুতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ধুনটের তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। ২০২২ সালের আগস্টে তারই বিরুদ্ধে মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বাদী। অভিযোগ আমলে নিয়ে ওসিকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওসিকে প্রত্যাহার এবং মামলার তদন্তের দায়িত্ব গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়া হয়। পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়। প্রায় দুই বছর তদন্তে পর পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
পিবিআইয় বগুড়ার পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর জানান, মামলায় জব্দ করা তিনটি মুঠোফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া র্যাবের ফরেনসিক ল্যাবসহ আরও কয়েক জায়গায় আলামত পাঠানো হয়েছিল। ফরেনসিক প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞর মতামতের ভিত্তিতে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ধর্ষণের কোনো অশ্লীল ভিডিও বা স্থিরচিত্র মুঠোফোনে ধারণ করা হয়নি বা মুছে ফেলা হয়নি। ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে করা ভিডিও মুছে দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ জন্য তাকে বাদ দিয়ে মামলার প্রধান আসামি মুরাদুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলমান আছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল