খোলা আকাশে উড়ছে পঙ্খীরাজ, চিল, ড্রাগন, হাজারি গোলাপ, ডিঙি নৌকাসহ জাতীয় পতাকার আদলে তৈরি নানা রঙের ঘুড়ি। হাতে নাটাই নিয়ে ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত ছেলে বুড়োসহ নানা বয়সী মানুষ। ঘুড়ি ওড়াতে এবং ঘুড়ি উৎসব দেখতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ফরিদপুরের ডিক্রির চর ইউনিয়নের পদ্মার পাড়ের ধলার মোড় এলাকায়। আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফেরাতে ফরিদপুরের ধলার মোড়ের পদ্মার বিশাল চরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় ঘুড়ি উৎসবের। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। আজ শুক্রবার বিকেলে ঘুড়ি উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা। ‘চলো হারাই শৈশবে’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঘুড়ি উৎসবে যোগ দিতে সকাল থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সী মানুষ হরেক রকমের ঘুড়ি নিয়ে হাজির হন পদ্মারপাড়ে।
এ সময় কয়েক শ' প্রতিযোগী বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও রঙের ঘুড়ি নিয়ে অংশ নেন উৎসবে। নানা আকৃতির ঘুড়ির মধ্যে আরো ছিল মাছ, ঈগল, প্রজাপতি, রংধনু, মানুষের মুখোশ, লেজযুক্ত ঘুড়ি। দুপুরের পর থেকে মানুষের ঢল নামে ঘুড়ি উৎসবে। ফরিদপুর ছাড়াও, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলা থেকে ঘুড়ি উৎসবে যোগ দিতে আসেন অনেকেই। এসময় হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় অন্যরকম আমেজ তৈরি হয় ধলার মোড়ের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।
কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে ঘুড়ি উৎসবে এসেছেন চার বন্ধু রাকিব, সুজন, তরিকুল ও হাসনাইন। তারা জানান, গত বছরও তারা এ উৎসবে এসেছিলেন। শুধু ঘুড়ি উৎসবে যোগ দিতেই নয়, পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে এসেছেন একটু বিনোদনের আশায়।
মাদারীপুরের স্কুল শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘুড়ি উৎসবে এসেছি স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। আমরা শৈশবে ঘুড়ি উড়িয়েছি, কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম ঘুড়ি কিভাবে উড়াতে হয় তা জানেই না। তাই তাদের দেখাতে এখানে এসেছি।
রাজবাড়ীর বানিবহ থেকে এসেছেন হামিদুল হক। তিনি বলেন, শৈশবে হারিয়ে গেলাম ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে। অনেক মজা হয়েছে। ফরিদপুরের টেপাখোলা এলাকার আফজাল হোসেন তার দশ বছরের নাতিকে নিয়ে এসেছেন উৎসবে। হরেক রকমের ঘুড়ির সাথে পরিচয় করাতেই তাকে নিয়ে উৎসবে এসেছেন বলে জানান। আফসানা ইয়াসমিন নামের এক গৃহবধু ছেলে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ঘুড়ি উৎসবে। তিনি বলেন, ঢাকায় থাকি, বছরের একবার হলেও এই দিনটিকে সামনে রেখে বাবার বাড়িতে আসা হয়। ছেলে মেয়েরা ঘুড়ি উড়াতে পেরে অনেক আনন্দ পায়। বাংলার ঐতিহ্য ঘুড়ি উড়ানো প্রতিটি জেলায়ই করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এবারের ঘুড়ি উৎসবকে ঘিরে বসেছিল হরেক রকমের পসড়া নিয়ে মেলা। মেলায় গ্রামীণ খাবারসহ নানা পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছিলেন দোকানীরা। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে সন্ধ্যার পরও লোকে লোকারণ্য ছিল গোটা এলাকা। ৮ম বারের মতো এ ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে ফরিদপুর সিটি নামের একটি সামাজিক সংগঠন। ঘুড়ি উৎসবে আগত বিজয়ী প্রতিযোগীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল