গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ‘বনবিভাগের জমি’ নিয়ে বিরোধের জেরে এক কৃষকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের তাঁতীসূতা (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের শেখ বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কবজি বিচ্ছিন্ন হওয়া কৃষক হযরত আলী তাঁতীসূতা (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের মৃত হাবিজ উদ্দিনের ছেলে। তাকে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে প্রতিপক্ষের আহতরা হলেন- একই গ্রামের মৃত রাম দুলাল বিশ্বাসের ছেলে টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার পুলিশ কনস্টেবল অমৃত চন্দ্র বিশ্বাস (৫২), তার বড় ভাই অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাস (৬২) এবং তার মেয়ে সঙ্গীতা বিশ্বাস (১৭)। তাদেরকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হযরত আলীর ভাতিজা শাকিল আহমেদ সবুজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের জমি তার চাচা ভোগদখল করে চাষাবাদ করে আসছেন। ওই জমি নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে আদালতের মামলা চলমান রয়েছে। প্রতিপক্ষ অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাস গং ওই জমি তাদের বলে দাবি করে আসছেন। মঙ্গলবার সকালে অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাস এবং তার ভাই পুলিশ কনস্টেবল অমৃত চন্দ্র বিশ্বাস বিরোধপূর্ণ জমিতে চাষ করতে যান। এ সময় কৃষক হযরত আলী তাদের জমি চাষ করতে বাধা দেন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল অমৃত চন্দ্র বিশ্বাসের হাতে থাকা দা দিয়ে হযরত আলীর বাম হাতের কব্জি কোপ দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাসের বড় ভাই প্রফুল্ল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমার ছোট ভাই অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাস জমিতে চাষ করতে যায়। এ সময় কৃষক হযরত আলী ও তার স্বজনেরা আমার ভাইকে মারধর করে। তার চিৎকার শুনে ছোট ভাই পুলিশ কনস্টেবল অমৃত চন্দ্র বিশ্বাস ও ভাতিজি সঙ্গীতা বিশ্বাস ঘটনাস্থলে যান। একপর্যায়ে কৃষক হযরত আলী তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তাদের মুমূর্ষু অবস্থায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমার ভাইদেরকে ফাঁসানোর জন্য হযরত আলী লোকজন তার বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে।
শ্রীপুর রেঞ্জের সদর বিট কর্মকর্তা আলাল উদ্দিন জানান, তাঁতীসূতার ওই জায়গা বন বিভাগের। অনেক আগে থেকেই ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। বন বিভাগ গত বছর কিছু আকাশি চারা রোপণ করেছে। চলতি বছরেও চারা রোপণ করবো। এটা বন বিভাগের জায়গা, এ জায়গা নিয়ে মারামারির কিছু নেই।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অমৃত চন্দ্র বিশ্বাস নাগরপুর থানায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তিনি মঙ্গলবার সকালে ডাক নিয়ে রেঞ্জ অফিসে গিয়েছেন; কিন্তু তিনি বাড়িতে গেছেন কিনা আমার জানা নেই।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সুদেব চক্রবর্তী বলেন, হযরত আলী নামে একজন বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন নিয়ে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আক্তার জানান, এখানে দুই পক্ষের মারামারি হয়েছে। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম