গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে রামদেব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়ার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
রবিবার দুপুরে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের রামদেব উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে শত শত শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সুন্দরগঞ্জ-রংপুর আঞ্চলিক সড়কে এসে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ওই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় বিভিন্ন স্লোগানে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেশমী আক্তার, শারমিন আক্তার ও সোহেলী আক্তার, ৮ম শ্রেণির শেফালী আক্তার, লামিয়া আক্তার, সাগরিকা আক্তার, প্রাক্তন ছাত্র মেহেদী হাসান, নাজমুল হুদা, শাহীন মিয়া, মাহমুদ ইসলাম, লিমন মিয়া, শফিকুল ইসলাম, এলাকাবাসী আউয়াল মিয়া ও মহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়া বিগত দিনে তার মামা হালিম বসুনিয়াকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সেই সময় প্রধান শিক্ষক ও তার মামা ক্ষমতার জোরে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অন্যান্য শিক্ষকদের কোণঠাসা করে রেখেছিল।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে প্রধান শিক্ষক লিজ-বন্ধক রেখে সেখানে বর্তমানে ধান ও ঘাস চাষ করা হচ্ছে। যা থেকে প্রধান শিক্ষক বছরে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে মসজিদ নির্মাণ করার কথা বলে প্রধান শিক্ষক শ্রেণিভেদে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়ে মসজিদ নির্মাণ না করেই টাকা আত্মসাৎ করে।
এছাড়াও স্কুলের পাশে একটি ডাকঘর ছিল, প্রধান শিক্ষক তা ক্ষমতার দাপটে উচ্ছেদ করে। এতে করে ওই এলাকার লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষক বিভিন্নজনকে হামলা-মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষককে দ্রুত অপসারণের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তারা।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বদিয়ার রহমান বলেন, আমার আসা বেশিদিন হলো না। আসার পর থেকেই দেখছি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ধান চাষ হচ্ছে। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক জানেন।
এদিন প্রধান শিক্ষকের রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। পরে মুঠোফোনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়া বলেন, আমার আগে যে প্রধান শিক্ষক ছিলেন, তিনি ওই মাঠের জমিটি বন্ধক রাখেন। এখনো ওই অবস্থায় আছে।
তবে বর্তমান প্রধান শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে ২০০৯ সাল থেকে কর্মরত আছেন, এতদিনেও কোনো পদক্ষেপ নেননি কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্ধকের টাকা ম্যানেজ না হওয়ায় ওই জমি ছাড়িয়ে নেওয়া যায়নি। টাকার ব্যবস্থা হলে জমিটি ছাড়িয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার বেলাল হেসেন বলেন, আমরা জেনেছি শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেছেন। খেলার মাঠে ধান চাষ করা হয়েছে- এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই