নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাজ্জাদ হোসেন (২৪) নামে এক যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিবারের দাবি, নিহত সাজ্জাদ হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় আইলপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ‘ক্রাউন সিমেন্ট’ রেডিমিক্স ফ্যাক্টরিতে ভাংচুর চালিয়েছে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। পরে পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হন। খুনের ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে আটক করেছে।
রবিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মো. হাছিনুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আটকৃতরা হলেন, নাসির মোল্লা (৪৪), মশিউর রহমান (২৫), এনামুল হক (২৪), হামিদুল ইসলাম (৫২), নুরুল ইসলাম (৫৩), সাব্বির মোল্লা (২৯), রেজাউল করিম (৪৬), রিয়াদ (১৮), বাবু রাজবংশী (২৮) ও সাইফুল ইসলাম (৩১)।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নিহত যুবক একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। সে প্রতিদিন দিবারাত্রি আইলপাড়া এলাকায় হাঁটাচলা করত। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় আইলাপাড়ার কাঠপট্টি এলাকার ‘ক্রাউন সিমেন্ট’ রেডিমিক্স ফ্যাক্টিরির সামনে গিয়ে কোম্পানিটির একটি গাড়িতে ঢিল ছুড়লে তাকে আটকে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন ফ্যাক্টরির নিয়োজিত লোকজন। পরে অতিরিক্ত মারধরের ফলে সাজ্জাদ হোসেন মারা যায়। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে ‘ক্রাউন সিমেন্ট’ রেডিমিক্স ফ্যাক্টরিতে ভাংচুর চালায়। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টাা করেন। এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মো. হাছিনুজ্জামানসহ অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়।
এদিকে সাজ্জাদ “মানসিক ভারসাম্যহীন” জানিয়ে তার মামা আল আমিন হোসেন বলেন, সে প্রায় সময় রাতের বেলা রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। “আমাদের এলাকাতেই ফ্যাক্টরি। দশ মিনিটের হাঁটা পথ। সাজ্জাদ তো পাগলের মতো, এলাকার সবাই জানে। রাতে ঈদ গাহের সামনের রাস্তায় ক্রাউন সিমেন্টের গাড়িতে ঢিল দিছিলো। এই কারণে ওরে ধইরা কারখানার ভেতরে নিয়া রাতভর পিটাইয়া মারছে।”
চার ভাই বোনের মধ্যে বড় সাজ্জাদ নবম শ্রেণির পর পড়াশোনা করে ছেড়ে দেন। তার বাবা কামাল এলাকায় এলাকায় ঘুরে ঘুরে মুরগি বিক্রি করেন। পরিবারের বড় সন্তানকে হারিয়ে শোকাহত সাজ্জাদের বাবা-মা।
তার চা দোকানি মামা আল আমিন বলেন, “ওরে নাকি ছিনতাইকারী বইলা কারখানার ভেতরে নিয়ে পিটাইছে। কিন্তু এলাকার সবাই জানে যে, ও পাগল কিসিমের মানুষ। ওরে ঘরে বাইন্ধাও রাখা যায় না, নিজের মনে ঘুইরা বেড়ায়। সেই পোলাডারে মাইরা ফেললো!”
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আমরা ১০ জনকে আটক করেছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মো. হাছিনুজ্জামান বলেন, নিহত সাজ্জাদ হোসেন ক্রাউন সিমেন্টের গাড়িতে টিল ছুড়লে গ্লাস ভেঙে যায়। পরে রাত্রীকালীন গাড়ির চালক, হেলপার ও রাত্রীকালিন শিফটে কারখানায় যারা কাজ করেন তারা তাকে ধরে এনে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত করার পর সে মারা যায়। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল