২৫ অক্টোবর, ২০২১ ১৪:৫১

এই প্রথম পেট-সিটি প্রযুক্তি স্থাপনে এক ধাপ এগিয়ে দেশ

অনলাইন ডেস্ক

এই প্রথম পেট-সিটি প্রযুক্তি স্থাপনে এক ধাপ এগিয়ে দেশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ক্যাম্পাসে ২ টি পেট-সিটি মেশিন, রেডিও কেমিস্ট্রি সুবিধাসহ ১ টি সাইক্লোট্রন মেশিন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) এ ১টি পেট-সিটি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনস্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস) “সাইক্লোট্রন সুবিধাদিসহ পেট-সিটি স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এগুলো স্থাপন করা হয়। 

রবিবার সকালে পেট-সিটি ও সাইক্লোট্রন সুবিধাদির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সানোয়ার হোসেন। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সদস্য (জীব বিজ্ঞান) অধ্যাপক ডা. অশোক কুমার পাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামীম মমতাজ ফেরদৌসী বেগম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আগত প্রায় ৩০০ জন অতিথিবৃন্দ।

উল্লেখ্য, PET এর পূর্ণরূপ হলো Positron Emission Tomography এবং CTএর পূর্ণরূপ Computed Tomography।  যে সব স্থানের কোষগুলো বেশি সক্রিয় থাকে পেট স্ক্যান কেবল সেইসব স্থানের চিত্র/তথ্য প্রদান করে থাকে; অপরদিকে সিটি স্ক্যান কোন স্থানের গঠনগত এবং অবস্থানগত তথ্য/চিত্র সূক্ষ্মভাবে প্রদান করে। এই দুইটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত স্ক্যানারে একটি ফিউশন ইমেজ একই সময়ে পাওয়া যায়। এই দুটো ইমেজের সমন্বিত ইমেজটি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে শরীরের যেসব স্থানের কোষগুলো অধিক সক্রিয় অর্থাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য/চিত্র চিকিৎসককে কোন বেদনাদায়ক পরীক্ষা এবং সার্জারী ছাড়াই রোগ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে সাহায্য করে। 

একটি নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতেও এই পরীক্ষাটি করা হয়।  এই পরীক্ষাটি করার জন্য সামান্য পরিমান স্বল্পঅর্ধায়ুর (১০৯.৭মিনিট) তেজস্ক্রিয় পদার্থ(18F-FDG) রোগীর দেহে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শিরা পথে দেয়া হয়। এই আইসোটোপটি শরীরের যেসব স্থানের কোষগুলো অধিক সক্রিয় সেসব স্থানে জমা হয় এবং স্ক্যানারের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে ৯০% এর অধিক পেট-সিটি ব্যবহৃত হয়। পেট-সিটিতে ব্যবহৃত 18F-FDG তৈরি করতে দরকার হয় সাইক্লোট্রন মেশিন।

সাইক্লোট্রন  বিজ্ঞানে একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার যেখানে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে মানব চিকিৎসা এবং গবেষণার জন্য তেজস্ক্রিয় পদার্থ তৈরি করা হয়। নিনমাসে স্থাপিত IBA Cyclone 18/9 MeV সাইক্লোট্রনটির মাধ্যমে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ 18F-FDG ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগীদের ক্যান্সার নির্ণয় করা হচ্ছে। সাইক্লোট্রনের মাধ্যমে আরও 11C, 13N, 15O, 64Cu, 67Ga, 68Ga, 89Zr, 111In, 123I, 124I, 99mTc তৈরি করে ক্যান্সারসহ মানব দেহের অন্যান্য রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহার করা সম্ভব।  বর্তমানে এই 18/9 MeV সাইক্লোট্রনটির মাধ্যমে উৎপাদিত 18F-FDG দেশের ৪ (চার) টি সরকারী ও ২ (দুই) টি বেসরকারী PET-CT স্থাপনায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই সাইক্লোট্রন স্থাপনের মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসা বাংলাদেশের আপামর জনগণের সাধ্যের মধ্যে এসেছে। এই সাইক্লোট্রন মেশিন স্থাপনের ফলে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য রোগীদের বিদেশে যাওয়ার হার হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর