বগুড়ার বাজারে এখন সস্তায় মিলছে সবজি। খুব অল্প দামে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীন এসব ফসল। উৎপাদন খচর তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক। উত্তরাঞ্চলের সবজির অন্যতম বৃহৎ মোকাম বগুড়ার মহাস্থানগড় হাটে ২ টাকা কেজিতে মিলছে ফুলকপি। মূলা, বাধাকপিও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। অন্যান্য শীতকালীন সবজির কিছুটা দাম থাকলেও চাষাবাদে সার, কীটনাশক, নিড়ানি ও সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে ফসল উৎপাদন করেছেন। সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সবজির ন্যায্য মূল্য না পেয়ে তাদের চোখে-মুখে যেন হতাশার ছাপ। কৃষকরা বলছেন, লাভের আশায় সবজি উৎপাদন করে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এদিকে সব ধরনের সবজির দাম কমায় সাধারণ জনগণের মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।
জানা যায়, শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমে মহাস্থান হাটে সবধরণের সবজির সরবরাহ বেড়ে গেছে। তবে দাম কম পেয়ে চাষিদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। সাধারণ ক্রেতারা কমদামে সবজি ক্রয় করতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। শীতের সবজিতে সরগরম উত্তরাঞ্চলের সবজির অন্যতম বড় পাইকারি হাট বগুড়ার মহাস্থান হাট। বাজারে শীতকালীন সবজি রেকর্ড পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে। জেলায় অনেক হাট থাকলেও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে মহাস্থানহাট বিখ্যাত। যে কারণে এ বাজারেই কাঁচা শাকসবজি বিক্রির জন্য বেছে নেয় কৃষকরা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা লাভের আশায় প্রতিদিন এই হাটে সব ধরনের সবজি নিয়ে আসেন। প্রচুর উৎপাদন ও আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম ঠেকেছে তলানীতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে জেলায় বেশি পরিমাণে সবজি উৎপাদন হয়েছে। প্রতি বছর এই সময়ে সবজির দাম কমে যায়। তবে উৎপাদন কমে গেলে আবারও সবজির দাম বাড়তে পারে। এই হাট থেকে প্রতিদিন সকালে রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যিক শহর চট্রগ্রাম ও সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় প্রায় শতাধিক ট্রাকে এসব সবজি পাইকাররা কিনে নিয়ে যান।
বগুড়ার মহাস্থানহাট ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এলাকাজুড়ে শুধু সবজি। দূরদূরান্ত থেকে কৃষকরা বিভিন্ন শীতকালীন সবজি এনে রাস্তার দুইপাশে সারি সারি অটোভ্যান, ভটভটি ও মিনি ট্রাক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে হাটের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। কৃষকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন ক্রেতার জন্য। আড়ৎসহ এখানে-ওখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে সবজি। ব্যাপারীরা কাঙ্ক্ষিত দাম না বলায় বেশির ভাগ কৃষক সকালের দিকে সবজি বেচেননি। তারা দাম বাড়ার আশায় বসেছিলেন। কিন্তু সরবরাহ বেশি হওয়ায় পাইকাররা কম দাম বলছেন কৃষকদের। বাধ্য হয়ে কম দামে সবজি বেচতে হচ্ছে তাদের। ফলে কৃষকের মাঝে দেখা গেছে, হতাশার ছাপ। কারণ দাম এতোটা কমেছে যে, কৃষকরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বগুড়ার রাজাবাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা পিস, মূলা ১০ টাকা কেজি, বেগুন ৩০টাকা, টমেটো ৪০টাকা, গাজর ৩৫টাকা, শসা ২৫টাকা, পিঁয়াজ ৪৫ টাকা, আলু ৪৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, করল্লা ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি পিস বাধা কপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০টাকায়। এর আগে ফুলকপি কেজিতে বিক্রি হলেও এখন পিস হিসাবে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
রাজাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আমিনুর ইসলাম জানান, বগুড়ার সবচেয়ে বড় সবজির মোকাম মহাস্থান হাট থেকে পাইকারি সবজি কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করতে হয়। এই হাটে সবজির দাম কম। কিন্তু এখান থেকে সবজি নিয়ে আসতে গাড়ি ভাড়া, খাজনা ও লেবার খচরসহ কেজি প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা খরচ হয়। যে কারণে খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার এলাকার চাষি ফজলুল হক জানান, মৌসুমের শুরুতে মূলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও গেল ১৫ দিন ধরে দাম কমে এসেছে। সর্বশেষ ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও ১৫ দিনের ব্যবধানে তা ২ থেকে ৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। ১৫ দিন আগে ১৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে ফুলকপি বিক্রি করেছেন। এখন তা ২ থেকে ৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, শুরুতে ভালো দাম পাওয়া গেলেও এখন দাম কমে আসায় খরচের টাকাও উঠছে না। এছাড়া হাটে আমদানি বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে।
তিনি আরো জানান, আগের চেয়ে সার, কীটনাশকসহ শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গেছে। হঠাৎ বাজারে সবজির এমন দরপতন হওয়ায় বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
বগুড়া রাজাবাজারের পাইকারি আড়ৎদার মদিনা ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাফায়েতুল ইসলাম বাবু জানান, জেলায় প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। বাজারে এখন সব ধরণের সবজির আমদানি তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। যে কারণে দামও কমে গেছে। বগুড়ার সবজি দেশের অন্যান্য জেলায় যাবার পরও উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। বাজার এ রকম থাকবে না। আদমানি কমে গেলে দাম আবার বেড়ে যেতে পারে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতলুবর রহমান বলেন, জেলায় চলতি বছর শীতকালিন সবজির চাষ ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ফলন ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। গত বছর সবজির উৎপাদন ভালো হয়েছিলো। এবছর লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে গেছে। শীতকালীন সবজির দাম শুরুতে একটু বেশি হয়। পর্যায়ক্রমে যত সরবরাহ হবে সেটির দাম কমে যায়। চলতি বছর সবজির ভালো ফলন হওয়ার কারণে এবং বাজারে সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কমেছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল