বাংলাদেশের অর্থনীতি একাধিক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছে-উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, বৈদেশিক দায় বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতে অনিয়ম এবং তারল্য সংকট। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত রেখেছে এবং সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে বলে ব্যাংকের অর্ধ-বার্ষিক মুদ্রানীতি বিবৃতিতে (এমপিএস) উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ডেপুটি গভর্নর, নীতিনির্ধারক, পরামর্শক, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের পরিচালক এবং মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় গভর্নর বলেন, যতক্ষণ না মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের নিচে স্থায়ীভাবে নেমে আসে, ততদিন নীতি রেপো হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ থাকবে। এছাড়া স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির হার ৮ শতাংশ বজায় রাখা হবে।
জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যে নীতি নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে নীতি সুদের হার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামলে সুদের হার ধীরে ধীরে কমানো হবে।
রিজার্ভ পুনর্গঠন ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে হস্তক্ষেপ করবে। প্রতিদিন দুই দফায় রেফারেন্স বিনিময় হার প্রকাশ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানানে হয়।
খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশঙ্কা করছে, মার্কিন শুল্কবৃদ্ধি, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়া এবং সরবরাহ চেইনের ব্যাঘাত দেশের রপ্তানি ও অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে, নীতিগত সুদের হার প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বয় করা হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি উৎপাদনশীল খাতের জন্য প্রণোদনা ও সমন্বিত নীতিমালা নেওয়া জরুরি। তাদের মতে, রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কার কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত