সুলতানা রাজিয়া, ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি নাম। ভারতবর্ষের ইতিহাসে দিল্লির সিংহাসনে বসা একমাত্র নারী। ৮০০ বছর আগে শাসন করেছেন গোটা ভারতবর্ষ। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক। এ ছাড়াও একজন যোগ্য সুলতান ও যুদ্ধক্ষেত্রে একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে ছিল তার সুখ্যাতি। তীক্ষ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তিনি রাজকার্য পরিচালনা করেছিলেন। সুলতানা রাজিয়া জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১২০৫ সালে। দীপ্ত কঠিন ক্ষণজন্মা এই নারীর জীবন প্রদীপ নিভে গিয়েছিল খুব অল্প দিনেই। সুলতানা রাজিয়ার বাবা শামস-উদ-দীন ইলতুৎমিশ ছিলেন দিল্লির সুলতান। ১২১০ থেকে ১২৩৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে ইলতুৎমিশ নিজেও একজন দক্ষ শাসকের খ্যাতি অর্জন করেন। মৃত্যুর আগে নিজের উত্তরাধিকারী মনোনয়নের বিষয়ে সুলতান ইলতুৎমিশ চিন্তায় পড়ে যান। কারণ ইতিমধ্যে তার বড় ছেলে নাসিরুদ্দিন মাহমুদ মারা গেছেন। সুলতান নিজ সন্তানদের মধ্যে নাসিরুদ্দিনের ওপর বেশি ভরসা করতেন। বাকি যে দুই ছেলে আছেন তাদের কেউই সিংহাসনে বসার যোগ্য ছিলেন না। এরই মধ্যে তার জ্যেষ্ঠ মেয়ে রাজিয়া বেশ বুদ্ধিমতী, চৌকস, প্রজাপ্রীতি ও যুদ্ধকৌশল শিখে গেছেন। ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগে ইলতুৎমিশ অযোগ্য পুত্রদের পরিবর্তে যোগ্য কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করে যান।
রাজকুমারী রাজিয়া মেধা, বুদ্ধি এবং অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন। সুগঠিত সুন্দর দেহ এবং রূপ সৌন্দর্যের অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি গড়ে ওঠেন। সে যুগে রাজিয়ার মতো বিরল প্রতিভাধারীর অন্দরমহলে বেড়ে ওঠা বিস্ময়েরই ছিল। তার সাহসিকতা এবং মেধায় মোহিত হতেন স্বয়ং সুলতান ইলতুৎমিশ। তিনি রাজিয়াকে ভালোবাসতেন ছেলেদের চেয়েও বেশি। বাবার শাসনকাজের প্রতি মেয়ের আগ্রহ পরিলক্ষিত হতো সব সময়। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি সমরবিদ্যা এবং শাসনকার্য পরিচালনার নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে তিনি রাজিয়াকে নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন। রাজিয়া ছিলেন বুদ্ধিমতী, বিদূষী ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। কিন্তু ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তার আমির উমরাহগণ রাজিয়ার শাসন মেনে নিতে চাইলেন না, ইসলাম ধর্মে স্ত্রীলোকের শাসন হারাম- এই অজুহাতে। তারা ইলতুৎমিশের পুত্র রুকনউদ্দিন ফিরোজকে সিংহাসনে বসান। কিন্তু ফিরোজ ছিলেন মদ্যপ, লম্পট, অযোগ্য ও অপদার্থ। তিনি মদ-সুরায় মত্ত হয়ে পড়ে থাকতেন। ফিরোজের এ অবস্থার সুযোগ নেন তার মা শাহ্ তুরকান। মাতা-পুত্র মিলে ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন। উভয়েই ছিলেন অত্যাচারী। ফলে তাদের অত্যাচার এবং স্বার্থপরতায় অতিষ্ঠ হয়ে রাজ্যের অভিজাতগণ মাতা-পুত্রকে বন্দী করে রাজিয়াকে সিংহাসনে বসান।