শনিবার, ২৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঈদ রোজাদারদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

ঈদ শব্দটি আরবি ‘আওদুন’ মূলধাতু থেকে এসেছে। এর অর্থ ফিরে আসা, বারবার আসা। ধর্মীয় পরিভাষায় ঈদ বলতে আমরা উৎসব, পর্ব, আনন্দ ইত্যাদি বুঝি। ফিতর অর্থ ফাটল, ভাঙন, ভাঙা ইত্যাদি। এক কথায় ঈদুল ফিতর অর্থ হলো, রোজা ভাঙার উৎসব। সুদীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আল্লাহর নির্দেশে আমরা এদিন রোজাকে ভঙ্গ করি, তাই এ দিনটির নাম ঈদুল ফিতর। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদিন সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই দিনটিতে তোমরা রোজা রেখ না। এদিন তোমাদের জন্য আনন্দ-উৎসবের দিন। খাওয়া আর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ-উৎসব করার দিন। আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।’ মুসনাদ আহমাদ, ইবনু হিববান।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গেলেন। তিনি মদিনায় এসে দেখলেন মদিনাবাসী পারসিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বসন্তের পূর্ণিমারাতে ‘মেহেরজান’ আর হেমন্তের পূর্ণিমারাতে ‘নওরোজ’ নামক উৎসবে এমনসব আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠত; যা কোনো সুস্থ বিবেকবান লোকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তিনি মদিনাবাসীকে ডেকে বললেন, ‘আল্লাহ এ দুটি দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি দিন তোমাদের আনন্দ উৎসব পালনের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার একটি হলো ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা। তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে এ দুটি ঈদ বা উৎসব পালন করবে।’ আবু দাউদ, নাসায়ি।

সেই থেকে মুসলিম উম্মাহ যথারীতি প্রতি বছর ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করে আসছে। এ হিসাবে এ বছরও মহান রব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় আমরা পবিত্র ঈদুল ফিতর আদায় করব। ঈদ উদ্যাপন করব ইসলামী শরিয়তের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী। সাহাবায়েইকরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদরা যেভাবে ঈদ উদ্যাপন করেছেন, আমরাও তাঁদের মতো ঈদ উৎসব করব ইনশা আল্লাহ।

ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেছেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের দিন (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায়) রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।’ বুখারি। ঈদের নামাজের আগে গোসল করা সুন্নাত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমার (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।’ ইমাম মালিক।

ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কিছু আহার করার কথা হাদিসে আছে। বিশেষ করে হাদিসে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না।’ বুখারি। ঈদের দিন আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেছেন, ‘প্রতি ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুসজ্জিত হওয়া মুস্তাহাব।’ আল মুগনি। ঈদের আরেকটি করণীয় হলো, এদিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর পোশাক পরিধান করা। হজরত জাবির (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্দর জোব্বা ছিল যা তিনি দুই ঈদে ও জুমার দিনে পরিধান করতেন।’ বায়হাকি।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ঈদের একটি গুরুত্ব কর্তব্য। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শরিয়তে সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করাকে ওয়াজিব করা হয়েছে; যা একদিকে ত্রুটিযুক্ত রোজাকে পবিত্র করে, অন্যদিকে এর দ্বারা অসহায়-নিঃস্বদের প্রয়োজন কিছুটা হলেও পূরণ হয়।’

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর