শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আল্লাহর ওপর ভরসা...

মো. আমিনুল ইসলাম

আল্লাহর ওপর ভরসা...

তাওয়াক্কুল শব্দের অর্থ হলো আল্লাহর ওপর ভরসা করা। আল্লাহকে নিজের অভিভাবক মেনে চলা। অভিভাবক তাকেই বলে যিনি তার অধীনস্থ লোকের কল্যাণের কথা চিন্তা করেন এবং সব অকল্যাণ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আবার তার মানে এই নয় যে হাত-পা গুটিয়ে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে ঘরে বসে থাকা। বরং আল্লাহর দেওয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফলাফলের জন্য তাঁর ওপর নির্ভর করার নামই হলো তাওয়াক্কুল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে নবী তুমি বল, আমার জন্য আল্লাহতায়ালাই যথেষ্ট, যারা নির্ভর করতে চায়, তাদের তো তাঁর ওপরই নির্ভর করা উচিত। (সুরা যুমার, আয়াত ৩৮)। তারা বলল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমাদের উত্তম কর্মবিধায়ক। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৭৩)। আখেরাতের পুরস্কার তাদের জন্য যারা বিপদে ধৈর্য ধারণ করে এবং যারা তাদের মালিকের ওপর ভরসা করে। (সুরা নাহল, আয়াত ৪২)। নেককার মানুষ হছে তারা, যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং সর্বাবস্থায় নিজেদের মালিকের ওপর ভরসা করে। (সুরা আল আনকাবুত, আয়াত ২৯)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে তাওয়াক্কুলের ফজিলত সম্পর্কে এ ধরনের বহু আয়াত কোরআনে নাজিল করেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা যদি সত্যিকারভাবেই আল্লাহর ওপর ভরসা কর তবে তিনি পাখিদের মতোই তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। ভোরবেলা পাখিরা খালি পেটে বেরিয়ে যায় এবং বিকালে ভরা পেটে নীড়ে ফিরে আসে। (তিরমিজি শরিফ)। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহই তাঁর বান্দার একমাত্র সাহায্যস্থল। তিনিই আমাদের রব। মানুষ সব সময় তাঁর ওপর ভরসা করবে এটাই স্বাভাবিক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করি, যিনি আমাদের রব, তোমাদেরও রব, বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই যার নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতের মুঠোয় নেই। (সুরা হুদ, আয়াত ৫৬)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন হাসবুনাল্লাহু ওয়া নেয়ামাল ওয়াকিল (অর্থ, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম পৃষ্ঠপোষক)। সুবহানাল্লাহ। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনের অনেক সুরায় তাঁর ওপর আস্থা ও ভরসা রাখার কথা বারবার বলেছেন। তাঁর ওপর ভরসা রাখলে তিনি ওই ব্যক্তির প্রতি যথেষ্ট হবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য সংকট উত্তরণের একটা পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন যার উৎস সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। (সুরা তালাক, আয়াত ২-৩)। মুমিন মুসলমানের উচিত সব কাজে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। আল্লাহর ওপর আস্থা ও ভরসা রাখার মাধ্যমে দুনিয়ায় রিজিক ও পরকালে বিনা হিসাবে জান্নাত পাওয়ার চেষ্টা করা। আল্লাহর ওপর ভরসা করা ও তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি মুমিন মুসলমানের জন্য তাঁর ওপর ভরসা করাও অপরিহার্য। তাই আল্লাহকে ভুলে গাফেল হওয়া থেকে বিরত থাকা আমাদের সবার উচিত। আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের পুরস্কার হলো জান্নাত লাভ। রসুল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মত থেকে ৭০ হাজার ব্যক্তি বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের অন্যতম গুণ এই যে তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে। (বুখারি ও মুসলিম)। সুতরাং আমাদের জীবনে দুঃখ-কষ্ট থাকবেই। বিপদ, বালা-মুসিবত আসবেই। আমাদের এসব ক্ষেত্রে বিচলিত হলে চলবে না। আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর ওপর তাওয়াক্কুলকারীদের পছন্দ করেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর