রানী সরকার আরও কিছুদিন বাঁচতে চান। বাঁচার আকুতি নিয়ে হাতজোড় করে কাঁদছেন তিনি। রবিবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রখ্যাত এই অভিনেত্রী। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের তিন তলায় ২ নম্বর কেবিনে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। চিকিৎসকরা বলছেন, বার্ধক্য ছাড়াও পিত্তথলির পাথর এবং বাতজ্বরসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন এই সিনিয়র অভিনেত্রী। ক্ষীণ কণ্ঠে অনেক কষ্টে কথা বলতে পারলেও কথা জড়িয়ে যায়। দুচোখ বেয়ে অনবরত গড়িয়ে পড়ছে অভিমানের অশ্রু। গতকাল অসুস্থ রানী সরকারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে তিনি বলেন, আমি আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। আপনারা আল্লাহর কাছে আমার জন্য জীবন ভিক্ষা চান। নিজের জন্য নয়। আমি মরে গেলে আমার মৃত ভাইয়ের দুটি এতিম বাচ্চা পথে গিয়ে দাঁড়াবে। পৃথিবীতে ওদের দেখাশোনা করার কেউ নেই। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র জগৎসহ কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। যে ক'টা দিন বেঁচে আছি আর কারও দয়া চাই না। একসময় যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলাম তখন বিনা পারিশ্রমিকে অনেকের কাজ করে দিয়েছি। কাউকে কখনো কষ্ট দেইনি। তা সত্ত্বেও শেষ জীবনে এসে নিঃস্ব হলাম কেন। এখন আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই কিংবা দু'বেলা আহার জোটে না কেন। চিকিৎসা করানোর পয়সা পর্যন্ত নেই। তাহলে সারা জীবন কী করলাম। তিনি চিকিৎসকের কাছেও আকুতি জানিয়ে বলেন, আমাকে বাসায় যেতে দিন। আমি এখন মরতে চাই না। প্রখ্যাত অভিনেত্রী রানী সরকার নিঃস্ব অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে গুরুতর অসুস্থ তিনি। ওষুধ কেনা তো দূরের কথা, প্রায় প্রতিদিনই উপোষ করতে হচ্ছে তাকে। মোহাম্মদপুরের নবদয় মোড়ের ছোট্ট একটি ভাড়া ঘরে থাকেন। তার সঙ্গে আছে মৃত ভাইয়ের দুটি মেয়ে। ওরা লেখাপড়া ও নিঃস্ব ফুপুকে দেখাশোনা করে। বড় মেয়েটি নবম শ্রেণীতে পড়ে। অর্থের অভাবে তাদেরও পড়ালেখা বন্ধের পথে।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অনেক কষ্টে তিনি বলে উঠেন, 'কি হবে আমাকে নিয়ে লিখে, কেউ তো আমার পাশে এসে দাঁড়াবে না। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। বাপ মরা ভাইয়ের মেয়ে দুটোর কি হবে। ওদের মা-ও মারা গেছে। মানুষের কাছ থেকে যা অর্থ সাহায্য পাই তা ঘর ভাড়া আর সংসার খরচে চলে যায়। চিকিৎসা করানো আর সম্ভব হয় না। রানী সরকার পঞ্চাশের দশকের শেষ ভাগে প্রথমে মঞ্চ, বেতার ও পরে টিভি এবং চলচ্চিত্রের অভিনয়ে যুক্ত হন। তার প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র 'দূর হ্যায় সুখ কা গাঁও'। প্রথম চলচ্চিত্রের নামের মতো তার সুখের গ্রাম সত্যিই দূরে রয়ে গেছে। প্রায় চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। দুস্থ এ অভিনেত্রীকে সহযোগিতা করতে ০১৭৩৯৫১৫১৮১ এ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।