- রাজ্জাক ভাই, আমি জানি আপনি অসুস্থ...
- আমাকে অনুুরোধ করো না সাগর...
- রাজ্জাক ভাই আপনি কি জানেন, আপনার 'ময়নামতি' রিমেক হয়েছে! চলে আসুন না যমুনা ফিউচার পার্কে ব্লকবাস্টারস সিনেমাসে আজ বিকেল পাঁচটায়...।
তার সঙ্গে কথা হলো এ টুকুনই। খোঁজ নিলাম বাপ্পারাজ ও সম্রাটের কাছে। রাজ্জাক ভাই বেশ অসুস্থ। যমুনা ফিউচার পার্কের নিচে ঠিক পাঁচটায় গাড়ি থেকে নামছেন রাজ্জাক ভাই। তাকে দেখে যমুনার কর্তারা ঊষ্ণ সংবর্ধনা জানালেন। তার এই যে সিনসিয়রিটি, নিষ্ঠা ও চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি ভালোবাসা- আমাকে তো বটেই অনেককেই মুগ্ধ করে। চলচ্চিত্রকে খুব খুবই ভালোবাসেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রতি তার ভালোবাসার প্রমাণ এখনো তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন, পরিচালনা করে যাচ্ছেন। অনেক তরুণপ্রাণ তার এই কর্মস্পৃহাকে শ্রদ্ধা করে। তিনি আমাদের চলচ্চিত্রে ৪৮ বছর ধরে অভিনয় করে যাচ্ছেন, হয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা।
তার এই কিংবদন্তি হয়ে ওঠা তেমন সহজ ছিল না। অনেক কষ্ট করে, ছোট ছোট করে বড়ো হওয়ার স্বপ্নের দিকে তিনি এগিয়েছেন। তার দেশপ্রেম আমার ভালোলাগে। কি দারুণ অভিনয় করেছিলেন সেই তরুণ বয়সে 'জীবন থেকে নেয়া' ছবিতে। তার সেই তারুণ্যদীপ্ত দেশপ্রেমিক চরিত্রের ছায়া এখনো আমি দেখতে পাই তার কর্মে, তার পথচলায়।
একটি দিনের কথা মনে পড়ছে। আমাদের একটি ছবি বানাবেন রাজ্জাক ভাই। সব কিছু ঠিকঠাক, শুটিং শুরু হবে। আমাকে খুঁজছেন। শেষে দিন তিনেক পর রাজ্জাক ভাইকে সময় দিলাম। তিনি এসে আমাকে 'আয়না কাহিনী'র চিত্রনাট্যের একটি কপি ধরিয়ে দিলেন। আমি বললাম, রাজ্জাক ভাই শুধু এটি দেওয়ার জন্য এলেন, আপনি কষ্ট করে এলেন কেন? অন্য কাউকে দিয়ে...।
বললেন, তুমি প্রযোজক, তোমাকে ছবির স্ক্রিপ্ট না দিয়ে শুটিংয়ে যাই কি করে।
এই হলেন রাজ্জাক ভাই। আমাদের নায়করাজ।
সে দিন আমি খুব লজ্জা পেয়েছিলাম, এ জন্য যে, এত বড়ো মাপের একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক শুধু শুটিয়ের আগে এভাবে নিজে এসে স্ক্রিপ্ট দিচ্ছেন আমাকে।
রাজ্জাক ভাইকে দেখার জন্য ছোটবেলায় টিকিট কেটে সিনেমা হলে যেতাম, শুধু তা নয়। রাজ্জাক ভাইয়ের বাসা ছিল আমাদের স্কুলের কাছে। সে সময় তিনি এক বিশাল সেভলয়েট প্রাইভেটকার চালাতেন। সে সময় রাজ্জাক ভাই 'ছদ্মবেশী' নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ওই ছবিতে একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল। যেটি রাস্তায় চলত আবার পানিতেও। আমার ধারণা ছিল রাজ্জাক ভাইয়ের গাড়িটিই ওই গাড়ি। গাড়িটি দেখার জন্য বহুবার তার বাসার সামনে গিয়েছি। কিন্তু তখনো বুঝতে পারিনি গাড়িটি ছিল শুটিংয়ের। রাজ্জাক ভাইয়ের এক শ্যালক ছিল, আমার এক বন্ধুর বন্ধু। তার সঙ্গে রাজ্জাক ভাইয়ের বাসার সামনে যেতাম। একদিন রাজ্জাক ভাই বিষয়টা লক্ষ্য করলেন। তিনি আমাদের ডেকে নিলেন ভেতরে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন বাড়িটা। সেই বাসায় ছিল একটি সুইমিং পুল। গুলশানের বাড়ি, বাড়িতে সুইমিং পুল। আমি বেশ পুলকিত হলাম।
রাজ্জাক ভাই চিরদিনই সংসারী। স্ত্রী-সন্তানদের তিনি আগলে রেখেছেন পরম-মমতায়। সংসার জীবনে সুখী একজন মানুষ। তেমনি তিনি সুখী চলচ্চিত্র জগৎ নিয়ে। তিনি এই ইন্ডাস্ট্রিকে দেখেন নিজের সংসারের মতো। তাই এখনো আপন করে রেখেছেন। তিনি আমাদের এই জগতের রাজা।