'সংসার' নামে চলচ্চিত্রে প্রথম আমি নায়করাজ রাজ্জাকের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করি। এক বছর পর ১৯৬৯ সালে 'শেষ পর্যন্ত' চলচ্চিত্রে তার প্রেমিকা হলাম। মেয়ে থেকে প্রেমিকা- আমি মোটেও স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। জহির রায়হান ভাই আমাকে বোঝালেন, 'আরে পাগলি এটি তো বাস্তব নয়, শুধুই অভিনয়।'
চলচ্চিত্রকার হিসেবে রাজ্জাক ভাই যেমন অদ্বিতীয় তেমনি মানুষ হিসেবেও অতুলনীয়। তাকে ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার এহতেশাম সাহেবের 'পীচ ঢালা পথ' চলচ্চিত্রের শুটিং শুরুর তিনদিন আগে আমার মা মারা যান। কুলখানির দিনই প্রথম শুটিং তারিখ ঠিক হয়। এ অবস্থায় কাজ করা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু নির্মাতা কিছুতেই শিডিউল মিস করতে রাজি নন। কোনো উপায় নেই। তার ওপর রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে ওই দিনের প্রতিটি শট ছিল খুবই রোমান্টিক। রাজ্জাক ভাই এত সুন্দরভাবে আমাকে বোঝালেন, শেষ পর্যন্ত আর 'না' করতে পারিনি। পরিচালক যখন অ্যাকশন বলছেন- রাজ্জাক ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে মিষ্টি হেসে শট দিয়েছি। শট শেষ হলে মায়ের জন্য অঝোরে কেঁদেছি।
রাজ্জাক ভাইয়ের নিজের প্রযোজিত পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র 'অনন্ত প্রেম'-এ নায়িকা হিসেবে আমাকে নিলেন। ঝুঁকি নিয়ে কাপ্তাইয়ের গভীর জঙ্গলে শুটিং করা হলো। জঙ্গলের মধ্যে আমাকে যাতে কষ্ট করে হেঁটে ভেতরে যেতে না হয় সে জন্য পালকির ব্যবস্থা করা হলো। একটি চুম্বন দৃশ্য ছিল। রাজ্জাক ভাই এমনভাবে দৃশ্যটি বোঝালেন খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম। কাজ শেষ করে মাথায় এলো- এ কি করলাম! আমার তো এখনো বিয়েই হয়নি। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম। রাজ্জাক ভাই ছুটে এলেন। তিনি বললেন, 'ঠিক আছে ছবির দৃশ্যগুলো কেটে বাদ দেব।' কিন্তু পরে যখন দৃশ্যগুলো দেখলাম একটুও খারাপ লাগেনি। অসাধারণ শৈল্পিকতায় রাজ্জাক ভাই দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। তিনি আমার মনে-প্রাণে প্রিয় মানুষ আর নায়ক হয়ে থাকবেন আজীবন। তার জন্মদিনে রইলো অজস্র শুভেচ্ছা।