বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে এলেন-
হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত আমি। ২০০০ সালের শুরুতে ইটিভিতে সহযোগী প্রযোজক এবং ২০০৩ সালে এটিএন বাংলায় যোগদান করি। বিবিসি থেকে নিউজ প্রোডাকশনে ট্রেনিং নিই। এরপর ডকুমেন্টারি 'আমরা করবো জয়' ও ২০০৪ সালে 'আমরাও পারি' নির্মাণ করি। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক পুরস্কার লাভ করে। ২০১৪ সালে বীরাঙ্গনাদের নিয়ে 'জননী' শিরোনামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করি। তবে এসব ব্যস্ততার মধ্যেও চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি এবং অবশেষে শুরু করলাম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'মহুয়া সুন্দরী'র নির্মাণ কাজ। আসলে মিডিয়া জগৎই আমার ধ্যান-জ্ঞান। মিডিয়াকে পূর্ণতা দিতে আমি এর প্রতিটি শাখায় আজীবন কাজ করে যেতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন দর্শকের ভালোবাসা ও সহযোগিতা। আশা করি বড় পর্দায়ও মানসম্মত কাজ দিয়ে দর্শকের মন জয় করতে পারব।
বর্তমানে চলচ্চিত্রের অবস্থা অনুকূল নয়, তারপরও কেন ঝুঁকি নিলেন?
না, ঝুঁকি নয়, এই নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। কারণ সত্যিকারের চলচ্চিত্র চলে না এ কথা আমি মানতে নারাজ। চলচ্চিত্রের মন্দ সময়ে 'মনপুরা' ছবিটি ইতিহাস গড়েছে। আসলে আমাদের চলচ্চিত্র এখন দর্শক দেখতে চায় না অনেক কারণে। এর মধ্যে একটি হলো নিজস্ব সংস্কৃতিবর্জিত গল্প এবং অন্যটি চলচ্চিত্রের নামে নাটক নির্মাণ। এখন অনেকেই ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে গল্পের বিষয়টি মাথায় রাখে না। দর্শক ছবিতে নিজের জীবন ও পারিপাশ্বর্িকতার প্রতিচ্ছবি দেখতে চায়। তাই তারা নিজেদের কৃষ্টির গল্প খোঁজে। ১৮ বছরে মিডিয়া জীবনে অসংখ্যবার গ্রামগঞ্জে গিয়েছি। দেশীয় ছবির প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা দেখেছি। তারা ছবিকে 'বই' বলে, মানে ছবিতে গল্প খোঁজে। অন্যদিকে এখন ছবির নামে যেভাবে নাটক নির্মাণ হচ্ছে তা দেখে দর্শক বিরক্ত হয়ে প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ হচ্ছে। তাই আমি জীবনের গল্প নিয়ে আসছি। এই ছবি দর্শক অবশ্যই দেখবে। এটি আমার আত্মবিশ্বাস।
তবে এ ধরনের গল্প দর্শক এখন কতটা গ্রহণ করবে?
শতভাগ গ্রহণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ প্রথমত, দেশীয় সংস্কৃতির গন্ধমাখা গল্প। দ্বিতীয়ত, এই গল্পকে সময় উপযোগী করে ঢেলে সাজিয়েছি। গল্পের চাহিদা অনুযায়ী লোকেশন, সেট ডিজাইন, গান , পোশাক, অভিনয়শিল্পী নির্বাচন করেছি। এক কথায় সবকিছু জীবন্ত করে পর্দায় তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। ছবিটিতে নাম ভূমিকায় পরীমণি অসাধারণ কাজ করেছে। তার অভিনয় নিঃসন্দেহে দর্শকের মন কাড়বে। সংগীতে ইমন সাহা ও অমিত চাটার্জি, শিল্প নির্দেশনায় কৃতী রঞ্জন বিশ্বাস, পোশাক পরিকল্পনায় তানিয়া তাসলিমাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সবাই তাদের সেরা কাজ উপহার দিয়েছেন। আমি সবার কাজে মুগ্ধ। ফেব্রুয়ারিতে ভারত যাচ্ছি ছবির কালার কারেকশন, সাউন্ড মিউজিকসহ পোস্ট প্রোডাকশনের কাজে। এই ছবি নিয়ে আমার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে 'মহুয়া সুন্দরী' চলচ্চিত্রের দিনবদলের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ছবিটি কবে নাগাদ প্রেক্ষাগৃহের পর্দায় আলো ছড়াবে?
নববর্ষের মহাউৎসবে, মানে আগামী পহেলা বৈশাখ মুক্তি পাবে ছবিটি। মহুয়া সুন্দরী হচ্ছে বাঙালির গানের, প্রাণের এবং লোকজ গল্পের ছবি। তাই বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবেই ছবিটি মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বিশ্বাস বাঙালির এই প্রিয় উৎসবের মতো ছবিটিও চিরদিনের মতো সবার প্রিয় হয়ে থাকবে।
চলচ্চিত্রকে ঘিরে আগামী ভাবনার কথাই শুনি-
আগামীতে বড় আয়োজনের দুটি নির্মাণ নিয়ে আসছি। একটি হলো পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের 'নকশী কাঁথার মাঠ' অন্যটি হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'নটিঙ্গেল' এর রিমেক। এই ছবির চিত্রনাট্য লিখছেন আর আর হোসেন আরিফ। অন্যদিকে 'নকশী কাঁথা'র মূলভাব নিয়ে সময় উপযোগী করে চিত্রনাট্য তৈরি করছি আমি। এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে দর্শকে সামনে বার বার হাজির হব, আমাদের চলচ্চিত্রের দিনবদল করব, এটিই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
* আলাউদ্দীন মাজিদ