আপনার 'মৃত্তিকা মায়া' ১৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। নিঃসন্দেহে এটা একটি বিরাট অর্জন। আপনার অনুভূতি কী?
এটা অপ্রত্যাশিত বিষয়। ভালো ছবি নির্মাণ করার চেষ্টা করেছি। দর্শকদের তথা সমাজকে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য এই ছবিটি নির্মাণ করেছি। পুরস্কার পাওয়ার আশায় নির্মাণ করিনি। তবে খুবই ভালো লেগেছে। আমার মধ্যে চরম উত্তেজনা কাজ করছে। বিভিন্নজন ফোন দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এটা আমার জন্য এক বিরাট অর্জন। জাতীয় পুরস্কার অর্জনের মধ্য দিয়ে 'মৃত্তিকা মায়া'র পুনর্জন্ম হলো। জীবনে বহুবার পুরস্কার পেয়েছি নাটকের জন্য। তবে চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার পাওয়াটা অনেক স্বপ্নের মতো। 'মৃত্তিকা মায়া'র স্ক্রিপ্টটি প্রায় ১০-১৫ বছর আগের করা। চলচ্চিত্রটি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিটি সেক্টরকেই গুরুত্ব দিয়েছি। 'মৃত্তিকা মায়া'র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমা হলের উদ্বোধন হয়। তখন যারা ছবিটি দেখেনি পুরস্কার পাওয়ার পর এ ছবিটি দেখার জন্য সবার মাঝেই আগ্রহ তৈরি হবে। কারণ মানুষ যদি না দেখে তাহলে পুরস্কার দিয়ে আর কী হবে! কিছু ছবি মানুষ প্রথমবার একবার দেখে আর কিছু ছবি মানুষ সারাজীবন ধরে দেখে। সারাজীবন ধরে দেখার মতোই ছবি 'মৃত্তিকা মায়া'।
নতুন কোনো ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা আছে?
না। জাতীয় পুরস্কার আমাকে আমার কাজের প্রতি অনেক বেশি দায়বদ্ধ করে তুলেছে। ইচ্ছা করলেই আমি যেনতেন কোনো ছবি নির্মাণ করতে পারব না। আমি ৫০টি ছবি নির্মাণ করতে চাই না। ৫টি ছবি নির্মাণ করেই দর্শকদের মাঝে সারাজীবন বেঁচে থাকতে চাই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চাই।
চারুনীড়মের বিষয়ে বলুন।
চারুনীড়মের মাধ্যমেই আমরা এক ঘণ্টার নাটক বাঁচাও আন্দোলন শুরু করি। এ ছাড়া ভালো নাটককে পুরস্কারও দিয়ে থাকি। ২০০৯ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে চারুনীড়মের কার্যক্রম শুরু হয়। ভালো নাটক নির্মাণ, এক ঘণ্টার নাটক বাঁচাও আন্দোলন এবং পুরস্কার প্রদান করা ছাড়াও চারুনীড়ম আরও কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে।
চ্যানেলগুলো প্রযোজকদের টাকা দিচ্ছে না। যার কারণে টিভিনাটক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি?
কোনো নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে এমনটি হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে যে কেউ নাটক বানাচ্ছে। যে কেউ নাটক বানানোর কারণে এ অবস্থা তৈরি হচ্ছে। নাটক তো যে কেউ বানানোর জিনিস না। চ্যানেলগুলোর ওপর সরকারের আরও কঠিন নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। প্রযোজকদের টাকা পরিশোধের জন্য দুই মাস বা তিন মাস একটা নির্দিষ্ট সময় থাকা উচিত। কোনো চ্যানেল যদি নাটক প্রচারের দুই মাস কিংবা তিন মাসের মধ্যে প্রযোজকের টাকা পরিশোধ না করে তাহলে ওই চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিলের নিয়ম করা উচিত। এতে করে নিজেদের চ্যানেলের লাইসেন্স রক্ষায় চ্যানেল মালিকরা নির্ধারিত সময়ে প্রযোজকদের টাকা ফেরত দেবে। যার ফলে নাটকের মানও অনেক বেশি উন্নত হবে। আর যে কেউ যাতে নাটক না বানাতে পারে এ বিষয়েও একটা নীতিমালা থাকা উচিত।
এবার মঞ্চের প্রসঙ্গ। মঞ্চকে নাটকের পাঠশালা বলা হলেও সেখানে পেশাদারিত্ব নেই। কী করা উচিত?
পেশাদারিত্ব না থাকলেও শিল্পীদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব আছে। টিকিট বিক্রির টাকা থেকে শিল্পীদের সম্মানী দিয়ে থিয়েটার বাঁচানো যাবে না। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। পেশাদারিত্ব তৈরি না হলেও আমাদের মঞ্চের শিল্পীদের প্রফেশনাল অ্যাটিচুড বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোস্তফা মতিহার