পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে সরকার পাট ও কাপড়ের ব্যাগ সুলভ মূল্যে বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, “পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করব, যাতে মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তন আসে।” সরকার এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেবে এবং যুবসমাজ ও পাটকল উদ্যোক্তাদের দিয়ে এসব ব্যাগ তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
আজ রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে 'PLEASE' প্রকল্পের জাতীয় জ্ঞান বিনিময় কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বড় বড় শপিং মলগুলো বলে ক্রেতারা নাকি ৪০ টাকা দিয়ে পাটের ব্যাগ কিনতে চায় না। অথচ বিদেশে গেলে সেই ক্রেতারাই ৩-৪ ডলার দিয়ে ব্যাগ কেনেন। দেশে কেন তাঁরা কিনতে চান না, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভ্রান্ত যুক্তি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। আমাদের সামগ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবস্থাও করুণ। সরকার সে অবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে।” একই সঙ্গে বাজার থেকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
“পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধ করতে পারলে জাতি হিসেবে দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব,” বলেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া ও রুয়ান্ডা পেরেছে, তাহলে আমরা কেন পারব না? শুধু পলিথিন নয়, অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, যেগুলোর সহজ বিকল্প আছে, সেগুলোর ওপরও জুনের পর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।”
উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ইউরোপের মতো দেশে যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত, সেখানেও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এগুলো রিসাইকেল করা সহজ নয়। আফ্রিকার অনেক দেশও জানে, অন্যান্য বর্জ্য একসময় পঁচে যাবে, কিন্তু পলিথিন বা প্লাস্টিকের বর্জ্য নিঃশেষ হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের এসব উদ্যোগে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে অংশ নিতে হবে। আমাদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। যখন জনগণ সচেতন হবে, সরকারও আইন প্রয়োগে সক্রিয় হবে, তখনই পরিবর্তন আসবে। সুপারশপ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হওয়াকে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছি।”
এ সময় তিনি বাংলাদেশ ফরেস্ট রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিএফআইডিসি)-কে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদনের নির্দেশনা দেন এবং রাবারের বদলে বাঁশ ও বেত দিয়ে পণ্য তৈরিতে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস, ইউএনওপিএসের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধারণ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম।
বিডি প্রতিদিন/আশিক