ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মশাই বলেছেন, এই সব র্যাঙ্কিং সঠিক তথ্য ও উপাত্ত নিলে আমরা তালিকার অনেক উপরে থাকতাম!
আমি সেবার যখন ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়'টি'র বিভাগীয় প্রধান আমাদের প্রথম দিনে'ই বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বিভাগ কিংবা তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করবে। গঠনমূলক সমালোচনা'র দরকার আছে। নইলে আমরা বুঝবো কি করে- কোথায় আমাদের ভুল হচ্ছে। ভুল'টা ধরিয়ে দিলে উন্নতি করা সহজ হয়।
সুইডেনে প্রথম যেবার পড়তে গেলাম; এক শিক্ষক বললেন, তোমাদের কাজ হচ্ছে- যে কোন কিছুতে প্রশ্ন করা। তোমরা যদি প্রচলিত সব থিয়োরি কিংবা তত্ত্ব গ্রহণ করে ফেল, তাহলে তো আর জ্ঞান-বিজ্ঞান এগুবে না। তাই তোমাদের কাজ হচ্ছে প্রচলিত সকল ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া কিংবা সমালোচনা করা।
এখন আমি নিজে যখন আমার ছাত্র'দের পড়াই; আমি সব সময় বলি, তোমরা অবশ্য'ই আমি যা পড়াচ্ছি; সেটাকে'ই সঠিক হিসেবে ধরে নিবে না। বরং ক্রমাগত প্রশ্ন করবে। এর মাধ্যমে আমরা নতুন কিছু শিখতে পারব।
একটা সময় মনে করা হতো সূর্য পৃথিবী'র চারপাশে ঘুরে। এরপর একদল মানুষের এই নিয়ে সন্দেহ হওয়াতে তারা প্রশ্ন ছুড়ে দিতে থাকে; এই নিয়ে ক্রমাগত সমালোচনা করতে থাকে।
একটা সময় এটা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হওয়ার ফলে'ই না আমরা এখন জানতে পারছি পৃথিবী সূর্যে'র চারপাশে ঘুরে। এখন আমরা যদি প্রচলিত সেই ধারণা'কে সঠিক ধরে নিয়ে কোন রকম প্রশ্ন না করে চুপচাপ বসে থাকতাম; তাহলে তো জ্ঞান-বিজ্ঞান আর এগিয়ে যেত না!
আর এই সন্দেহে'র জায়গা, প্রশ্ন করার জায়গা কিংবা সমালোচনা করার জায়গাটা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। কারণ সেখাকার শিক্ষক এবং ছাত্র'রা পড়াশুনা করবে, নিজেদের সমালোচনা করে নিজেরা নিজেদের ভাঙবে-গড়বে। জগতের সকল দেশে'ই এমন'টা ধরে নেয়া হয়!
তবে বাংলাদেশ নামক জনপদ হলে অবশ্য ভিন্ন বিষয়!
এই যেমন কিছুদিন আগে পৃথিবী'র বিশ্ববিদ্যালয় গুলো'র র্যাঙ্কিং নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। এই বছর ওই র্যাঙ্কিং এ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি এশিয়ার সেরা চারশো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে স্থান পায়নি। পৃথিবী'র কথা তো বাদ'ই দিলাম!
অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও এই র্যাঙ্কিং ফলো করে।
কোথায় এই ব্যাপার'টা স্বীকার করে নিবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। ভুল স্বীকার করে, নিজেদের সমালোচনা গুলো মাথা পেতে নিয়ে কিভাবে সামনে এগুনো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করবে। সেটা না করে উল্টো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বলেছেন, এই সব র্যাঙ্কিং সঠিক তথ্য ও উপাত্ত নেয় না। নিলে আমরা অনেক সামনে'র দিকে থাকতাম! চিন্তা করে দেখেন অবস্থা। এর মানে হচ্ছে- এরা এই র্যাঙ্কিং'টা পর্যন্ত মানছে না!
ভুল করা অস্বাভাবিক কিছু না। মানুষ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে'ই সামনে এগোয়। কিন্তু আপনি যদি সেই ভুল'টা'ই স্বীকার না করেন; তাহলে আপনি সামনে এগুবেন কিভাবে? এক'ই ভুল তাহলে আপনি আবার করে বেড়াবেন! অর্থাৎ উনারা যে ভুল করছেন, সেটা'ই উনারা স্বীকার করছেন না!
ভবিষ্যতে পৃথিবী কিংবা এশিয়ার তালিকা'র কথা বাদ'ই দিলাম; আমি খুব অবাক হবো না- এরপর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলো'র সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো'র মাঝে যদি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম খুঁজে না পাই!
ভুটান, মালদ্বীপে'র বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও একটা সময় আমাদের ছাড়িয়ে যাবে। তখনও আমাদের ভিসি মশাই এসে বলবেন- ওরা সঠিক তথ্য ও উপাত্ত নেয় নাই!
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন