সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ভারতে

নিহত ১২০ আহত ২০০, ১৪ বগি লাইনচ্যুত

কলকাতা প্রতিনিধি

ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ভারতে

কানপুরে বিধ্বস্ত ট্রেন —এএফপি

ভারতের কানপুরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১২০ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল স্থানীয় সময় রাত সোয়া ৩টার দিকে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের কানপুরের কাছে পুখরায়ানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটির ১৪টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় কমপক্ষে তিনটি কামরা। যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন ট্রেনটির অনেক যাত্রীই ঘুমিয়ে ছিলেন। ট্রেনটি ইন্দোর থেকে পাটনা যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর অনেক কামরা এমনভাবে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে যে, গ্যাস কাটার বড় যন্ত্র দিয়ে কামরা কেটে যাত্রীদের বাইরে বের করে আনা হয়। সকালের দিকে নিহতের সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গেই বাড়তে থাকে নিহতের সংখ্যাও। দুর্ঘটনায় ওই লাইন দিয়ে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনেক ট্রেনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কানপুর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে পুখরায়ানের দুর্ঘটনাস্থল থেকে বাস ও অ্যাম্বুলেন্স করে আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও লাইনে ফাটলের ফলেই এই দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। উত্তর-মধ্য রেলের মুখপাত্র বিজয় কুমার জানান ঘটনাস্থলে চিকিৎসকের প্রতিনিধি দল ও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পৌঁছেছেন। উদ্ধারকাজে রিলিফ ভ্যান ও উদ্ধারকারী দল কাজ করছে।

কানপুরের আইজিপি জাকি আহমেদ জানান ‘আহতদের দেহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিটি হাসপাতালকেই প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য ৩০টি অ্যাম্বুলেন্সকে কাজে লাগানো হয়েছে। উদ্ধারকাজের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক পুলিশ কর্মীকে’। কানপুরের ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন রেলমন্ত্রী।

দুমড়ানো বগির ভিতর জীবন্ত দুই শিশু : দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগির ভিতর থেকে দুই শিশুকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। এস ৩ বগিটি দুমড়ে-মুচড়ে উল্টে গিয়েছিল। ভিতর থেকে ছয় ও সাত বছরের দুটি ছেলেশিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এনডিটিভির খবরে জানা যায়, ওই দুই শিশুর কাছেই মৃত এক নারীকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ওই শিশুদের মা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রেনের বগি কেটে ৫০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

অনেককেই বিধ্বস্ত বগিগুলোর কাছে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখা  গেছে। তারা বিস্ময়ে হতবাক ছিলেন। চোখে ছিল জল। দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী বলেন, ‘ধপ করে একটি শব্দ। ঘুম ভেঙে গেল। দেখি ঘোর অন্ধকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান। কারণ আমি বেঁচে আছি। নিরাপদে আছি। কিন্তু আমি একেবারে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম।’ ৪৫ জন আত্মীয়ের সঙ্গে ভ্রমণ করছিলেন দীপিকা। কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছেন। হঠাৎ করে বিকট শব্দে ঝাঁকি খেলেন তিনি। খেয়াল করলেন তার চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারলেন, তিনি যে বগিতে আছেন তা বাতাসে উড়ছে। এভাবেই নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন কানপুরে  ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী দীপিকা।

সর্বশেষ খবর