শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সেই আহমেদ আলী এখন...

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সেই আহমেদ আলী এখন...

দলের কাছে কোনো চাওয়া নেই বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি এবং কুমিল্লা জেলার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী। তিনি বলেন, ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পড়লাম, আমাদের সময়ের আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য শেখ আবদুল আজিজ নানা আক্ষেপের কথা বলেছেন। তিনি জানালেন, তার কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি চান বঙ্গবন্ধুর আজীবনের ঘনিষ্ঠ সহচরদের মধ্যে অল্প যে কয়েকজন বেঁচে আছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন মাঝে মধ্যে তাদের খোঁজখবর নেন। তার কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী। দীর্ঘদিন ধরে তার শরীর ভালো-মন্দের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একটি কথার পর আরেকটি কথা বলতে তিনি কিছুক্ষণ সময় নেন, কানেও ভালো শুনতে পান না। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়লেও এখনো চিন্তা করেন দেশ ও জাতিকে নিয়ে। বিশেষ করে নিজের রাজনৈতিক আদর্শের গুরু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাটানো স্মৃতিগুলো তাকে সব সময় তাড়া করে ফিরে। হিসাব মেলান অতীতের আওয়ামী লীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নিয়ে। তিনি বলেন, দেশ মাতৃকাকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে মুক্ত করতে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগসহ আপামর জনসাধারণ। সবাই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিল। জাতির অবিসংবাদিত নেতাকে অর্থের মোহ কখনো কাবু করতে পারেনি। তাই স্বাধীনতা উত্তর রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও ব্যক্তিগত আদর্শ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। তবে তার চারপাশে থাকা কতিপয় চাটুকার সব সময় নানা ষড়যন্ত্র করে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। এসব ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে শেষ পর্যন্ত সপরিবারে নিজের জীবন দিতে হয়েছে তাকে। তবে সে ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাব— এসব চাটুকারদের লাগাম টেনে ধরতে। নতুবা জাতি গঠনে আওয়ামী লীগের সব ত্যাগ-তিতিক্ষা ম্লান হয়ে যেতে পারে। তিনি স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে সপরিবারে ঢাকায় নাজিরা বাজারে বসবাস করতেন। আহমেদ আলী থাকতেন পাশের আলু বাজার গলিতে। সাংগঠনিক কারণে প্রায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাতায়াত করতেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন তখন ছোট্ট সোনামণি। তাকে তারা খুকি বলে ডাকতেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে কয়েকজন আজীবনের ঘনিষ্ঠ সহচর আছেন, দলের গত বছরের মহাসম্মেলনে তাদের আমন্ত্রণ করা যেত। তাদের মুখ থেকে নতুনরা দলের ক্রান্তিকালের অভিজ্ঞতা শুনতে পারত। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে মহানগর এবং জেলা কমিটির মর্যাদা সমান করা হয়েছে। এটা ঠিক নয়। এতে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। এক বনে দুই বাঘ কখনো রাখা উচিত নয়। জেলা কমিটিগুলো মহানগরের বাইরে গিয়ে অনুষ্ঠান করে। জেলার অধীনে মহানগর কমিটিগুলো রাখা উচিত। প্রয়োজনে এ নিয়ে দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হবে। এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ১৯৩২ সালের পয়লা মার্চ বৃহত্তর কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাজলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি ডিগ্রি নেন। তিনি বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য ছিলেন, ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান। আহমেদ আলী ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিকথা’সহ কয়েকটি বই লিখেছেন। এখন আগের মতো তার বাসায় নেতা-কর্মীদের আর কোলাহল নেই। নীরবে নিভৃতে দিন কাটে তার। বাসার চার দেয়ালের মাঝেই নামাজ, বই ও পত্রিকা পড়ে তার সময় পার করেন।

সর্বশেষ খবর