শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
‘আমি সিরাজুল আলম খান-৩’

রাজনীতির রহস্যপুরুষের নিউক্লিয়াস তত্ত্বের বিতর্ক

পীর হাবিবুর রহমান

রাজনীতির রহস্যপুরুষের নিউক্লিয়াস তত্ত্বের বিতর্ক

রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খানের জবানবন্দিতে লেখা ‘আমি সিরাজুল আলম খান’ বইয়ের চুম্বক অংশ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ধারাবাহিক দুটি লেখা পাঠক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেই সময়ের কিংবদন্তিতুল্য ছাত্রনেতাসহ ছাত্রলীগ কর্মীদের অনেকেই এ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে, টেলিফোনে আমাকে তাদের পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে যেমন নির্মোহ সত্য বলে মন্তব্য করেছেন, তেমনি অনেকে দ্বিমত প্রকাশও করেছেন। বিশেষ করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক, ডাকসু ভিপি ও মুজিব বাহিনীর আরেক প্রধান তোফায়েল আহমেদ বইয়ের অনেক বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। টেলিফোনে তিনি আমাকে জানিয়েছেন, তার এই প্রতিক্রিয়া তিনি সিরাজুল আলম খানকেও অবহিত করেছেন।

সিরাজুল আলম খান, মরহুম আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ মিলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে ‘নিউক্লিয়াস’ বা গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ গড়ে তুলেছিলেন; তা নিয়ে এর আগে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীও প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, তাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য কখনই ছিল না। সিরাজুল আলম খান নূরে আলম সিদ্দিকীকে উদ্ধৃত করেই তার এ বইয়ের এক জায়গায় বলেছেন, ‘এটি যেহেতু গোপন সংগঠন ছিল, তাই সবার জানার কথাও ছিল না।’ এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও ’৭০ সালের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ও আবদুর রাজ্জাক এক বৈঠকে ‘নিউক্লিয়াস’ এবং ‘বিএলএফ’ গঠন ও এর সাংগঠনিক বিস্তৃতি সম্পর্কে অবহিত করেন। সিরাজুল আলম খান বলেছেন, ‘নিউক্লিয়াস’ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আগে থেকে অবগত ছিলেন না। এ বৈঠকেই তারা বঙ্গবন্ধুকে আশ্বস্ত করেন যে, স্বাধীনতার লক্ষ্যে ‘নিউক্লিয়াস’ এবং ‘বিএলএফ’র কর্মী বাহিনী সাংগঠনিকভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ। দেশজুড়ে সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত সদস্যরা স্বাধীনতার পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টি ও অন্যান্য সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এবার প্রথম আলোর ঈদসংখ্যায় এক সময়ের সিরাজুল আলম খানের ঘরানার ছাত্রলীগ কর্মী ও জাসদের মুখপাত্র গণকণ্ঠের সাংবাদিক মহিউদ্দিন আহমদ ‘সিরাজুল আলম খান এবং স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’ শিরোনামে লেখায় লিখেছেন, ’৬৯ সালের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি দেখেছেন, ছাত্রলীগের মধ্যে দুটি স্রোতধারা। একটির কেন্দ্রে শেখ ফজলুল হক মণি এবং আরেকটির মধ্যমণি সিরাজুল আলম খান। তিনি সিরাজুল আলম খানের ঘরানায় কেমন করে ঢুকে গেছেন। তখন তিনি একটি প্রক্রিয়ার কথা জানতেন যেখানে তারা সরাসরি স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের কথা বলতেন। আর ছাত্রলীগের অন্য গ্রুপের বন্ধুরা তাদের নিয়ে মশকরা করে বলত পাতি বিপ্লবী। তবে তখন থেকেই তিনি জানতেন, শেখ মুজিবই আসল নেতা। আর তার সবচেয়ে আস্থাভাজন শিষ্য হলেন সিরাজুল আলম খান। তারা শেখ মুজিবকে বলতেন বঙ্গবন্ধু আর সিরাজুল আলম খানকে ডাকতেন সিরাজ ভাই বলে। মুক্তিযুদ্ধের পর কলকাতা থেকে ফিরে আসার পর অনেকেই সিরাজুল আলম খানকে দাদা বলে ডাকতে শুরু করলেন। যা তার পছন্দ হলো না। ‘দাদা’ শব্দটির ব্যাপারে তার অ্যালার্জি ছিল। কারণ উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিনকে দাদা বলে সম্বোধন করা হতো। মহিউদ্দিন আহমদ আরও লিখেছেন, তার ধারণা ছিল শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে তিনি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করেন, অন্তত প্রকাশ্যে। সিরাজুল আলম খানকে দিয়ে তিনি অনেক কাজ করান। কিন্তু ১৯৭২ সালের ২১ জুলাই যখন বঙ্গবন্ধু সিরাজুল আলম খানের সমর্থিত ছাত্রলীগের পল্টনের সম্মেলনে না এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ ফজলুল হক মণির সমর্থিত ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগ দিলেন তখন তিনি ভীষণ ধাক্কা খেলেন। এমনটি হবে আগে নাকি কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। আবদুর রাজ্জাকও পল্টনে না এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেলেন। আর সিরাজ পন্থিরা পল্টনের ভাঙন থেকে পরবর্তীতে জাসদ তৈরি করলেন। মহিউদ্দিন আরও লিখেছেন, ১৯৮৩ সালে তিনি জাসদকে নিয়ে একটি গবেষণার কাজ শুরু করেন। তখন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বেরিয়ে বাকশাল গঠন করেছেন। তার জিগাতলার বাসভবনে নেতা-কর্মীদের ভিড়। তিনি তার বন্ধু ষাটের দশকের আরেক ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাককে নিয়ে দেখা করলেন। কর্মীদের ভিড়ে কথা বলতে না পারায় আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে রেজাউল হক মুশতাকের বাসায় চলে আসেন। চার-পাঁচ ঘণ্টার আলোচনায় আবদুর রাজ্জাক স্বাধীনতার নিউক্লিয়াসের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করলেন। আবদুর রাজ্জাক বললেন, ‘এটা ঠিক যে আমরা নিউক্লিয়াস তৈরি করেছিলাম। চিন্তাটা হয়েছিল ’৬২ সালে কাঠামো দাঁড় হয় ’৬৪ সালে। সিরাজ ভাই রূপকার বিষয়টা এমন নয়। আমাদের মধ্যে কাজ ভাগ করা ছিল। সিরাজ ভাই ছিলেন আমাদের থিওরেটিশিয়ান। আমি রিক্রুটিংয়ের কাজ দেখতাম। আরেফ ছাত্রলীগের মধ্যে আমাদের চিন্তার প্রসার ঘটাত। এরপর চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে যোগ দেয় আবুল কালাম আজাদ। আমরা আঙ্গুল কেটে রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিই দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার পেছনে ছুটব না। বিয়ে করব না। আমাদের না জানিয়ে স্কুল পড়ুয়া বালিকাকে আবুল কালাম আজাদ বিয়ে করায় তাকে বহিষ্কার করি। মুজিব ভাইকে সামনে রেখেই আমরা এটা শুরু করি। তিনিই আমাদের নেতা। এ ব্যাপারে তাকে আমরা কিছুটা জানাই ’৬৬ সালে। আর ’৬৯ সালে পুরোটা জানানো হয়। আমাদের সেলটির নাম দেওয়া হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’। নামটি গোপন ছিল। কাজকর্ম হতো খুবই গোপনে। আমরা বিপ্লবী বাংলা নামে হাতে লেখা একটি বুলেটিন বের করি। সাইক্লোস্টাইল করে এর কপি করা হতো। দুটো সংখ্যা বেরিয়েছিল।’

মহিউদ্দিন আহমদকে সিরাজুল আলম খান যা বলেছেন, ‘আমি সিরাজুল আলম খান গ্রন্থেও তাই লিখেছেন। তবে আবুল কালাম আজাদের নিউক্লিয়াস থেকে সরে যাওয়া নিয়ে আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্যের সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বক্তব্যের মিল নেই। রাজ্জাক যেখানে বলেছেন, শপথ ভঙ্গের জন্য বহিষ্কার, সিরাজ সেখানে বলেছেন, পারিবারিক দরিদ্রতার কারণে বলেকয়ে তিনি চলে গেছেন। এদিকে মহিউদ্দিন আহমদ ’৬২-র ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গেও কথা বলেছেন। রফিকুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে আগের কমিটিতে শাহ মোয়াজ্জেম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি সভাপতি ও শেখ ফজলুল হক মণি সাধারণ সম্পাদক হন। তাসের আসর থেকে সিরাজুল আলম খানকে ছাত্রলীগে রিক্রুট করেন এবং সাধারণ সম্পাদক হতে ভূমিকা রাখেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। শাহ মোয়াজ্জেম বলেছেন, মুজিব ভাই একটি লিফলেট ড্রাফট করেছেন ‘পূর্ববঙ্গ মুক্তিফ্রন্ট’ নামে। তখন আইয়ুবের মার্শাল ল। তিনি নিজেই সাইকেল চালিয়ে প্রেসে গিয়ে ছাপিয়েছেন। তারপর তাকে ডাকলে তিনিও সাইকেল চালিয়ে তার কাছে যান। বঙ্গবন্ধু শাহ মোয়াজ্জেমের হাতে এক বান্ডিল লিফলেট দিয়ে বললেন, ‘তোর বিশ্বস্ত লোক নিয়ে এগুলো ডিস্ট্রিবিউট করবি’। ইংরেজিতে লেখা লিফলেট নিয়ে তিনি গেলেন, রফিকুল্লাহ চৌধুরীর কাছে। দেখে তিনি বললেন, ‘বানান ভুল থাকলেও বাট ইট ক্যারিজ দ্যা মিনিং’। কে এম ওবায়দুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, ফরিদপুরের আনিস আর তিনি নিজে এই পাঁচজনের টিম মিলে রাত ১২টার পর নেতার নির্দেশে বিভিন্ন দূতাবাসের গেটের সামনে ফেলে আসতেন। শাহ মোয়াজ্জেম আরও বলেন, এখন অনেকেই স্বাধীনতার কথা নানাভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে বলে। বাট দিস ইজ দ্যা ফ্যাক্ট। বাংলাদেশপন্থি কেউ ছিল না। আমরা শেখ মুজিবের অনুসারীরা ছিলাম। আর কমিউনিস্টরা বলত ইললিটারিয়েট গ্রাজুয়েটের শিষ্য। শাহ মোয়াজ্জেমের বক্তব্যে বোঝা যায়, পূর্ববাংলার স্বাধীনতা নিয়ে শেখ মুজিবের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও  পরিকল্পনা ছিল।

১৯৬২ সালের ২৪ মার্চ মাঝরাতে ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনারের পলিটিক্যাল অফিসার শশাঙ্ক ব্যানার্জিকে তার অফিসে ডেকে আনেন। মানিক মিয়ার সঙ্গে ছিলেন শেখ মুজিব। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তারা আলোচনা করেন। তারপর শেখ মুজিব তাকে বললেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর কাছে একটি গোপনীয় চিঠি পাঠাতে চান। শেখ মুজিব চিঠিটা ব্যানার্জির হাতে দিলেন। চিঠিটা নেহেরুকে ব্যক্তিগতভাবে সম্বোধন করে লেখা। বৈঠকে ’৬৩ সালের শুরুতে লন্ডনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা, প্রবাসী সরকার গঠন ও মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার এবং মানিক মিয়ার ইত্তেফাকে লেখার মাধ্যমে প্রচার কাজ চালানোর পরিকল্পনা তুলে ধরেন ব্যানার্জির কাছে। চিঠির শেষ প্যারায় নেহেরুর কাছে নৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন ও সাজসরঞ্জাম চেয়ে অনুরোধ জানানো হয় এবং গোপনে শেখ মুজিব নেহেরুর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে দেখা করতে চান। চিঠি পাঠানো হলেও ভারত তখন চীনের সঙ্গে যুদ্ধে বিপর্যস্ত। দিল্লি মুজিবকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার বার্তা দিল। মুজিব ভাবলেন ঢাকায় ভারতীয় উপ-হাইকমিশনের আমলাদের কারণেই দেরি হচ্ছে। ধৈর্য হারিয়ে তিনি কৌশল পাল্টান। গোপনে আগরতলা গিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি গিয়ে নেহেরুর সঙ্গে আলাপ করে জানেন চীনের সঙ্গে যুদ্ধের পর নেহেরু এখনই আরেকটি ফ্রন্ট খুলতে চান না। শচীন্দ্র ফিরে এসে মুজিবকে জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাকে সাহায্য করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের ঢাকা উপ-হাইকমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নেহেরুর পরামর্শ ছিল, এরপর থেকে মুজিব যেন ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমেই যোগাযোগ করেন। শচীন সিংহের ভাষ্য, ’৯১ সালে দিল্লি গিয়ে মফিদুল হক লিখে এনেছিলেন যা ফয়েজ আহ্মদের আগরতলা মামলা, শেখ মুজিব ও বাংলার বিদ্রোহ বইয়ে ঠাঁই পেয়েছে। শচীন সিংহের ভাষ্যে ও নানা সূত্রে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, শেখ মুজিব আগরতলা গিয়েছিলেন ’৬৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে। তার সেই গোপন সফর সম্পর্কে পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা ও তার দলের নেতারা ছিলেন অন্ধকারে। এমনও জানা যায়, সেই সফরে শেখ মুজিব এক দিন আগরতলা আটকও হয়েছিলেন। আর তার সেই স্বাধীনতার মিশনের কারণে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি হয়েছিলেন। সেদিন তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান তাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে মুক্ত করেই আনেনি, আইয়ুব খানের পতনও ঘটিয়েছিল।

আ স ম আবদুর রবসহ জাসদপন্থি অনেকেই সিরাজুল আলম খানকে স্বাধীনতার রূপকার বলে থাকেন। আমি দেখেছি একসময় তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সিরাজুল আলম খানের লেখা বলেও প্রচার করতেন। যদিও সিরাজুল আলম খান লিখেছেন, বিএলএফ নেতারা পয়েন্ট লিখেছেন। এমনকি এক সময় মুজিববিদ্বেষী চিনাপন্থিরাও মওলানা ভাসানীকেই স্বাধীনতার প্রথম প্রস্তাবক বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যে সত্য উদ্ভাসিত ’৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা ও ’৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ভাঙাগড়া আওয়ামী লীগকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার স্বপ্নে নিরন্তর আপসহীন লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে এগিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ’৬২ সালে যদি নেহেরুর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য যোগাযোগ করে থাকেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়ে জেল খেটে থাকেন এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন তাহলে তিন নেতার নিউক্লিয়াস তথ্য বিতর্কের পরিণতি কী? বিএলএফের চার প্রধানের মধ্যে জাসদ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে রহস্যপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে সিরাজুল আলম খান অনেক আগেই পর্দার বাইরে চলে গেছেন। শেখ ফজলুল হক মণি ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল ধারার সঙ্গে সক্রিয় নেতৃত্বে ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক আমৃৃত্যু বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। জীবিতদের মধ্যে এখনো বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে কিংবদন্তি হয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় তোফায়েল আহমেদ রয়েছেন। এ বিষয়ে তার বিস্তর বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা আমি করব। ৭ মার্চ ’৭১ বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে নিয়ে আসার সময় সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে বললে বঙ্গবন্ধু কী বলে তাকে ধমক দিয়েছিলেন, সেটি তোফায়েল আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে অনেকবার আমার কাছে বলেছেন। ইতিহাসের স্বার্থে সময় এসেছে এখন তার সেটি মানুষের সামনে উপস্থাপন করার। এমনকি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ ষাটের জীবিত ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের দুই ধারার যারা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন সেই মতিয়া চৌধুরী ও রাশেদ খান মেননকেও বলা দরকার কখন কোন প্রেক্ষাপটে কীভাবে তারা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সবার বক্তব্যের আলোকেই আমি আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান থেকে এ নিয়ে একটি লেখা লিখব। অনেকে প্রশ্ন করেছেন, সিরাজুল আলম খানের লেখার অংশ নিয়ে কেন আমার এত আগ্রহ? ইতিহাসের প্রতি আমার অন্তহীন তৃষ্ণা রয়েছে। স্বাধীনতার পর সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা তাকে রাজনীতির রহস্যপুরুষ যা তার জন্য সম্মানের নয়, তবু ষাটের দশকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে, স্বাধীনতা সংগ্রামে ও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে তিনি যেমন ছিলেন নিবেদিত তেমনি অনেক আদর্শবান তরুণের কাছে মুজিব বাহিনীর চার প্রধানদের সঙ্গে একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারাও তখন নায়কের মতো তরুণদের সামনে আসন নিয়েছিলেন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কের আসনে হিমালয়ের উচ্চতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান যেমন ছিল তেমনি তার ছায়ায় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অনেক বীরের আসনও ছিল নায়কের মতো। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের সবার মাথার মুকুট। তাই তিনি তার কর্মী-সংগঠকদের কে কী করছেন তা জানলেও হয়তো নিজের পরিকল্পনা সব সময় বলেননি। সময়ের কাজ তিনি সময়ে করেছেন। যখন যাকে যেখানে যেভাবে কাজ করানোর সেভাবে করিয়েছেন।

সিরাজুল আলম খান তার বইয়ে বলেছেন, “৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার জন্য যখন সময় চেয়েছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু পরদিন ধানমন্ডির বাড়িতে ভোর ৫টায় যেতে বলেছিলেন। তিনি ও আবদুর রাজ্জাক যখন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রবেশ করলেন তখন নিচের তলার বেডরুমে বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব শুয়ে আছেন। ‘মুজিব ভাই জেগে। বললেন, এদিকে আয়। আমি তার পালঙ্কের একপাশে বসলাম, রাজ্জাক নিচে মোড়ার ওপরে। ভাবী অন্যদিকে ফিরে ঘুমিয়ে। মুজিব ভাইয়ের হাতটা বাড়ানো ছিল। আমি ও রাজ্জাক তার হাত ধরলাম। বললাম, আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। ১০-১৫ সেকেন্ড পর মুজিব ভাই বললেন, আমাকে কী করতে হবে বল? আমরা বললাম, বিদেশি বিশেষ করে ভারতের সাহায্য প্রয়োজন। আধা মিনিট সময় নিয়ে তিনি বললেন, যা; হবে। আমি তো লন্ডন যাচ্ছি, ব্যবস্থা হবে।’’

বঙ্গবন্ধুর লন্ডন অবস্থানকালে মিরপুর, মোহাম্মদপুরে বাঙালি-অবাঙালি রায়ট শুরু হয়। তাজউদ্দীন ভাইকে বললাম, এ পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়; মুজিব ভাইকে দরকার। পরের দিন মুজিব ভাইয়ের বাসার টেলিফোন থেকে তাজউদ্দীন ভাই তাকে ফোন করে ঢাকার পরিস্থিতি জানালেন। ৩-৪ দিনের মধ্যেই লন্ডন সফর সংক্ষিপ্ত করে মুজিব ভাই ঢাকা ফিরে এলেন। তৎকালীন তেজগাঁও বিমানবন্দরে বিরাট মিছিল নিয়ে আমরা তাকে স্বাগত জানালাম। বিমানবন্দর থেকে তার সঙ্গে একই গাড়িতে তাজউদ্দীন ভাই ও আমি ছিলাম। বাড়ি ফিরে তাজউদ্দীন ভাইয়ের সঙ্গে সামান্য কী যে বললেন, আমি শুনিনি। এরপর তাজউদ্দীন ভাই চলে গেলেন। রাজ্জাককে আমি আগে থেকেই মুজিব ভাইয়ের বাসায় থাকতে বলেছিলাম। তখন তার দুই পাশে আমি আর রাজ্জাক। আমাদের ঘাড়ে হাত দিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, সব ঠিক করা হয়েছে। ভারত অস্ত্র দেবে দেশের মধ্যে ট্রেনিংয়ের জন্য। পরে ভারতেও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা হবে। বর্ডারের দুই জায়গা দিয়ে অস্ত্র আনার ব্যবস্থা কর তোরা।

৭ দিনের মাথায় আমরা সীমান্তের দুটি জায়গা দিয়ে অস্ত্র আনার সম্ভাবনা বের করলাম। একটি চুয়াডাঙ্গা, যেখানে এসডিও ছিলেন তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। দ্বিতীয়টি ঝিনাইদহ, যেখানে এসডিপিও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (এসপি মাহবুব)। আমার সঙ্গে তৌফিকের পারিবারিক সম্পর্ক এবং মাহবুবের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক থাকার কারণে সহজে স্থান দুটি নির্ধারণ করার সুযোগ হয়।

১৯৭০ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ভোরবেলায় মুজিব ভাই শেখ মণি, রাজ্জাক, তোফায়েল ও আমাকে তার বাসায় যেতে বললেন। সময়মতো গিয়ে দেখলাম, মুজিব ভাই নিচের তলার বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো একজনের সঙ্গে কথা বলছেন। আমরা যেতেই ভদ্রলোককে বললেন, এই চারজনকে দিয়েই সব কাজ। আমরা আমাদের নাম বললাম। ভদ্রলোক নাম বললেন, চিত্তরঞ্জন সুতার। তিনি বিএলএফ নেতৃবৃন্দকে ২১, ড. রাজেন্দ্র রোড, নর্দান পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা-৭০২১ এই ঠিকানাটি মনে রাখতে বললেন। আমরা চারজন ওই ঠিকানাটি কয়েকবার মুখে মুখে উচ্চারণ করি এবং মুখস্থ করে রাখি।

১৯৭১ সালের ১৮ জানুয়ারি দুপুরবেলা মুজিব ভাই আমাদের চারজনকে তার বাসায় খেতে বললেন। গিয়ে দেখি, তাজউদ্দীন ভাইও আছেন। বললেন, আমার অবর্তমানে তাজউদ্দীনের সঙ্গে আলোচনা করে সব কাজ করবে। কলকতার ঠিকানাটা আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমরা বুঝতে পারলাম, আমাদের কাজ সঠিকভাবেই এগোচ্ছে।

ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি অস্ত্র আনার জন্য ডাক্তার আবু হেনাকে চিত্তরঞ্জন সুতারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কলকাতায় পাঠানো হয়। হেনা ফিরে এসে জানালেন, ফেব্রুয়ারির শেষ ও মার্চের প্রথম দিকে অস্ত্র আসবে। সীমান্তবর্তী ওই দুটি স্থানের কথাও চিত্তরঞ্জন সুতারকে জানিয়ে দেওয়া হলো। আর ট্রেনিংয়ের জন্য সারা দেশে আরও কিছু কেন্দ্র খোলা হলো।

সিরাজুল আলম খানের ভাষায়, একাত্তর সালের অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে পুলিশ, বিডিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে ‘ডি-ফ্যাকশনের’ পরিকল্পনা করে ‘নিউক্লিয়াস’। ৭ মার্চের পর থেকে যাবতীয় প্রচার কর্মকা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই পরিচালিত হতো। ‘নিউক্লিয়াসের’ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ মার্চ ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতেহারে বিষয়টি স্পষ্টভাবেই বলা আছে। ‘নিউক্লিয়াস’ (বিএলএফ হাইকমান্ড- শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলী) সবার সঙ্গে আলোচনা করেই মুজিব ভাই তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন এবং অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর মুখে উচ্চারিত, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাক্যটি সংযোজনের একটি পটভূমি আছে। যেমন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পেছনেও রয়েছে ঐতিহাসিক ঘটনা।

’৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার বেতার ভাষণের মাধ্যমে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন বাতিল করলে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামে। সে সময় বঙ্গবন্ধু হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে ছিলেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সেখানে উপস্থিত হলে তিনি তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুকুম দেন। শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য প্রত্যক্ষ সংগ্রাম। মার্চের ৩ তারিখ মধ্য রাতে বিএলএফের ৪ নেতার সঙ্গে বৈঠক করে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিস্তারিত আলোচনা হয়। মার্চের ৪ তারিখে বঙ্গবন্ধু বিএলএফের ৪ নেতাকে ডেকে নিয়ে তার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সম্পর্কে অবহিত করেন। এরপর প্রতি রাতেই আন্দোলনের সব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের ৪ নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসতেন।

৭ মার্চের ভাষণের বিষয়ে ৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু বিএলএফের ৪ নেতা ও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেদিন অধিক রাত পর্যন্ত বৈঠকে ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। তা হলো- ভাষণটি খুবই আবেগময় হতে হবে এবং মূল ভাষণটি তিন ভাগে বিভক্ত থাকবে।

সিরাজুল আলম খানের ভাষায়, আমাদের তরফ থেকে দেওয়া পরামর্শ ছিল ভাষণে ১. সংক্ষেপে অতীত ইতিহাসের বর্ণনা ২. নির্বাচনের ম্যান্ডেট অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবির পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীনতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং ৩. স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করা।

৬ মার্চ সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু, বিএলএফ এবং আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের একপর্যায়ে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড, ‘মুক্তির সংগ্রাম’ শব্দটি দিয়ে বক্তৃতা শেষ করার কথা বলেছে। তখন বিএলএফের পক্ষ থেকে তারা পরিষ্কার জানান, ‘মুক্তির সংগ্রাম’ ও ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ দুটো কথাই বক্তৃতার এক লাইনে রেখে শেষ করতে হবে।

তখন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। ৬ তারিখ বিকাল নাগাদ আওয়ামী লীগ হাইকামান্ড ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ এ ঘোষণা দিয়ে বক্তৃতা শেষ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে তাদের জানান।

সিরাজুল আলম খান আরও বলেছেন, ৪, ৫ ও ৬ মার্চ এই তিন দিন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অন্তর অন্তর আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড এবং বিএলএফ হাইকমান্ডের সঙ্গে ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পৃথক পৃথক বৈঠক হতো। ৬ মার্চ সন্ধ্যায় বিএলএফের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে জানানো হয়, শেষ লাইনটি ঘুরিয়ে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এভাবে বলতে হবে। কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু তাদের জানান, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বিএলএফের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। তখন বিএলএফ হাইকমান্ড ৭ মার্চের বক্তৃতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে পয়েন্টগুলো লিখে দেয়। এর দুই ঘণ্টা পরে বঙ্গবন্ধু বিএলএফ হাইকমান্ডকে কীভাবে জনসভায় বক্তৃতা করবেন তা শোনালেন।

মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান তোফায়েল আহমেদ আমাকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সিরাজুল আলম খানের বক্তব্য সঠিক নয়। বঙ্গবন্ধু স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নিজে ভাষণটি দিয়েছিলেন। ৭ মার্চ তার সামনে ধানমন্ডির বাসভবনে যখন সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধুকে বলছিলেন, আজ স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে জনগণ মানবে না, তখন বঙ্গবন্ধু তাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি জনগণের নির্বাচিত নেতা হিসেবে জানি আমাকে কী বলতে হবে। তুমি তোমার কাজে যাও।’ চলবে...

সর্বশেষ খবর