মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

তুবা জানে, পোশাক কিনতে গেছে মা

বাড্ডায় গণপিটুনিতে হত্যায় ৪ জন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

তুবা জানে, পোশাক কিনতে গেছে মা

রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তাছলিমা বেগম রেণু হত্যায় তিনজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে আদালত থেকে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে গণপিটুনির নেতৃত্ব দেওয়া হৃদয় নামের এক বখাটে। এদিকে নিহত রেণুর মেয়ে তুবা এখনো জানেনা তার মা আর বেঁচে নেই। গতকাল বাচ্চু (২৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে রবিবার রাতে বাপ্পী, শাহীন ও জাফর নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করা হলে ৩ জনের ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। এরমধ্যে জাফর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরআগে তাদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক জানান, রেণুুকে পেটানোর ঘটনায় মূল আসামি হিসেবে হৃদয় নামে একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের অভিযান চলছে। হৃদয় উত্তর বাড্ডায় তার বাবা হানিফ আলীর সবজির দোকানে কাজ করেন। পড়াশুনাও করেনি হৃদয়। এলাকায় আগে থেকে বখে যাওয়া যুবক হিসেবে পরিচিত। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকার রেণুর বাসায় যখন স্বজনদের শোকের মাতম চলছে তখন পুরো বাসায় খেলায় ব্যস্ত রেণুর চার বছর বয়সী মেয়ে তাসনিম তুবা। কখনো খেলার পুতুল, কখনো মায়ের ছবি হাতে পায়চারি করছে। চঞ্চল ছোট্ট শিশুটি জানে না, পৃথিবীতে তাকে আগলে রাখার কেউ নেই। তুবা এও জানে না পারিবারিক কলহের জেরে বাবা তাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল মমতাময়ী ওই মা। তুবা জানে তার মা তার জন্য পোশাক কিনতে গেছেন। গুজব নামের দানবের শিকার হয়ে পরপারে চলে গেলেন তিনিও। এদিকে সকালে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের সামনে ছেলেধরা সন্দেহে রেণুুকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এসময় তারা রেণুু হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে গুজব থেকে এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ প্রতিরোধে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। নিহত তাছলিমা বেগম রেণুু সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। উত্তরপূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েকে ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে মানুষরূপী একদল নির্বোধের চরম হিংস্রতার শিকার হন তিনি। পরে রেণুুর পরিচয় পাওয়া গেলে আশপাশের সিসিটিভি ও মোবাইল ফোনের ফুটেজ দেখে গ্রেফতারকৃতদের শনাক্ত করে পুলিশ। গতকাল ওই বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যে স্থানে রেণুুর রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে ছিল, ওখানে ইটের টুকরো দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। দ্বিতল বিদ্যালয়ে সিঁড়ি ঘরের দেওয়ালে তখন ছিল রক্তের দাগ। বিকাল পর্যন্ত আশপাশের কৌতূহলি মানুষ দেখতে আসেন স্থানটি। এরা জানালেন, সকালে ভর্তির খোঁজ নিতে আসেন রেণু। জুলাই মাসে কোনো স্কুলে ভর্তির কার্যক্রম চলে না, এমন সময়ে ভর্তি খবর জানতে এসে স্কুলের ছোট্ট মাঠে তাকে সন্দেহ করে চিৎকার করতে থাকেন অন্যান্য অভিভাবকরা। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম তার কক্ষে নিয়ে রেণুর বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিতে থাকেন। এরমধ্যে নিচে দুই শতাধিক লোক ওই স্কুলে জড়ো হয়। এদের মধ্যে ৬০-৭০ জন স্কুলের দোতলায় গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে রেণুকে টেনে হিঁচড়ে এনে বেধড়ক পেটাতে থাকে।

মর্মান্তিক এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এতে নীল টি শার্ট পরা হৃদয়কে হাতে লাঠি নিয়ে রেণুকে ক্রমাগত পেটাতে দেখা যায়। তার এই ছবি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জানা যায়, ১৯৯৬ সালেও উত্তর বাড্ডা কাঁচা বাজারে ছেলেধরা সন্দেহে ৪ যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন এলাকাবাসী। ওই সময় পুলিশকেও উত্তর বাড্ডার এলাকাবাসী তোয়াক্কা করেনি। ওই ৪ যুবককে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকেও ঘেরাও করে রাখে।

সর্বশেষ খবর