প্রিয়াংশু চক্রবর্তী সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। এই স্কুলে ক্লাস থ্রি থেকে আমরা দুই ভাই এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। ১৩২ বছরের পুরনো স্কুলটির সঙ্গে আমাদের গভীর আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে। দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল হিসেবে এর জন্মের সুনাম রয়েছে। প্রিয়াংশু এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতলার ১০ নম্বর বেডে অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি ক্যান্সার বিভাগের ডা. রেজানুর রহমানের অধীনে চিকিৎসাধীন। খেলাধুলা হাসিখুশিতে যে জীবন ভরে থাকার কথা সেটি এখন নিভে যাওয়ার আশঙ্কায়। বাড়িতে তার মা তিন বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী। তার বাবা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। প্রিয়াংশুর বড় বোন ক্লাস নাইনে পড়াশোনা করছে। গরিব দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে প্রিয়াংশুর চিকিৎসা করার কোনো সামর্থ্য নেই। তার ডান হাতের কাঁধের কাছে টিউমার ধরা পড়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন ক্যান্সারের প্রাথমিক স্টেজে আছে প্রিয়াংশু। তার ফুসফুসে পানি জমতেও শুরু করেছে। উন্নত চিকিৎসা ব্যয়বহুল। পরিবার যখন অসহায়, প্রিয়াংশুর উন্নত চিকিৎসা যখন অনিশ্চিত তখন জুবিলি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির বন্ধুরা সম্মিলিত হয়ে মানুষকে জাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তারা স্লোগান তুলেছে- ‘প্রয়োজনে রক্ত বিক্রি করবো তবু তোকে বাঁচাবো’। এই স্লোগান নিয়ে আমাদের জুবিলি স্কুলের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক যার গভীর ¯ন্ডেœহ ও মমতা পেয়েছি সেই হরিচরণ তালুকদারের ছেলে সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত মুখ মনীষ তালুকদার বাপ্পু এই মানবিক প্রচারণায় যুক্ত হলে আমার দৃষ্টিগোচর হয়। আমি নিজে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। নিজের সন্তানের মুখ ভাসে। প্রিয়াংশুর বিবর্ণ চোখের দিকে তাকালে ভাষা হারিয়ে ফেলি। তার বাবা-মা’র অসহায় দুটি চোখ বিষাদগ্রস্ত করে। যে শহরের বুকচিরে বইছে সুরমা, যে শহর শুয়ে আছে মেঘালয়ের কোলে এবং যে শহরের চারদিকজুড়ে হাওরের অথৈ জলরাশি, যে শহরে রয়েছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মায়া-মমতায় ভরা গভীর সম্প্রীতি, সেই শহরকে কতবার আমি হৃদয় দিয়ে ডেকেছি প্রেমের শহর বলে। কবিতা ও গানের শহর আড্ডা ও জল জোছনার শহর সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ব্যবসায়ী সমাজ, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা মানবিক মানুষেরা সাড়া দিলে প্রিয়াংশু নামের শিশুটি ফের তার শহরে, তার স্কুলের পাঠকক্ষে হাসিমুখে ফিরে যেতে পারে। প্রিয়াংশুর জন্য আজ জুবিলি স্কুলই নয়, যেন বেদনায় সুনামগঞ্জ শহর কাঁদছে। প্রিয়াংশুর উন্নত চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ বিবেকবান মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মিনতি করছি। প্রিয়াংশু বেঁচে গেলে তার পরিবার বেঁচে যায়। একটি জীবনই বেঁচে যাবে না, একটি স্বপ্ন এগিয়ে যাবে। তার বন্ধুদের মুখে তাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে। একটি শহরে তার প্রিয় স্বজনদের জীবনে যেমন স্বস্তি ফিরে আসবে তেমনি মানুষ মানুষের জন্য এই মানবিক অঙ্গীকার নিয়ে সমাজ আরও সামাজিক দায়িত্ব পালনে উৎসাহ বোধ করবে।
দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা জুবিলির সাবেক ছাত্রদের আজ এই শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর সময়। তার চিকিৎসার সাহায্য অর্থ পাঠানোর জন্য বিকাশ পারসোনাল অ্যাকাউন্ট ০১৭১৫৪০৯৫৫৫ ও ডাচ্ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং : ০১৭১৫৪০৯৫৫৫৮ দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন যারা চিকিৎসা সাহায্য চেয়েছেন কেউ খালি হাতে ফিরে আসেননি। অনাথ হৃতদরিদ্র অসংখ্য মানুষের জীবনের দায়িত্ব তিনি যেমন নিয়েছেন তেমনি অনেকের জীবন বাঁচাতে মানবিক ভূমিকা রেখেছেন। কখনো কার্পণ্য করেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমাদের নিবেদন, প্রিয়াংশুর জন্য একটি শহর কাঁদছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।