বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চলে গেলেন কবি রবিউল হুসাইন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

চলে গেলেন কবি রবিউল হুসাইন

সাহিত্যাঙ্গনের মানুষদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন (৭৬)। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকালে কবির বাসায় যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন তিনি। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে একাডেমির ফেলো রবিউল হুসাইনের লাশ। সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় লাশ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সেখানে নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হবে কবির কফিনে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে। কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ অনেকেই। ১৯৪৩ সালের ৩১ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন রবিউল হুসাইন। ১৯৫৯ সালে সেখানকার সিরাজুল ইসলাম মুসলিম হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ’৬২ সালে কুষ্টিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে ’৬৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। জীবনের নানা পর্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের আধুনিক বাস্তুকলা বিকাশে রবিউল হুসাইন এক বিশিষ্ট নাম। ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের বেশ কিছু স্থাপত্যকর্ম তার নান্দনিক চিন্তার সাক্ষ্য বহন করছে। বাংলা একাডেমির ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসসহ বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা বিন্যাসে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, জাতীয় কবিতা পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থেকে এ দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। রবিউল হুসাইনের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে- সুন্দরী ফণা, কোথায় আমার নভোযান, কেন্দ্রধ্বনিতে বেজে ওঠে, আমগ্ন কাটাকুটি, কবিতাপুঞ্জ। উপন্যাস- বিষুবরেখা। প্রবন্ধ-গবেষণা- বাংলাদেশের স্থাপত্য সংস্কৃতি। শিশুসাহিত্য- কুয়াশায় ঘরে ফেরা, দুর্দান্ত। সম্পাদনা গ্রন্থগুলো হচ্ছে- কবিতায় ঢাকা সাহিত্যকর্মে তার বৈচিত্র্যপূর্ণ অবদানের নিদর্শন। বাঙালি জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর তার সামগ্রিক সাহিত্যভুবন। গত শতকের ষাটের দশকে নানা ছোটকাগজের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছোটকাগজ আন্দোলনেও তিনি তার অঙ্গীকারের প্রমাণ রেখে গেছেন।

সর্বশেষ খবর