রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা

খালেদা জিয়া ছাত্রদের অস্ত্র দেন আমি দিয়েছি খাতা-কলম

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়া ছাত্রদের অস্ত্র দেন আমি দিয়েছি খাতা-কলম

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া ছাত্রদের অস্ত্র দিয়েছিলেন। আমি দিয়েছি খাতা-কলম। তিনি বলেন, বাঙালির প্রতিটি অর্জনে ছাত্রলীগের বড় ভূমিকা আছে। শহীদদের তালিকা যদি করি, তাহলে সেখানেও আছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। জাতির যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নীতি-আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। ছাত্ররাই আমাদের ভবিষ্যৎ। আগামীতে তারাই দেশের নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু তাদের যদি বিপথে নামানো হয়, তাহলে তারা দেশকে কীভাবে নেতৃত্ব দেবে? তিনি বলেন, অতীত সামরিক স্বৈরশাসকসহ খালেদা জিয়ারা ছাত্রদের বিপথে চালিত করে সন্ত্রাস-অস্ত্রবাজি-জঙ্গিবাদ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে। শিক্ষাঙ্গনকে তারা সন্ত্রাসীদের জায়গায় পরিণত করেছিল। আমরা চাই না কোনো ছাত্র আর কোনোদিন বিপথে চালিত হোক। আমি চাই, ছাত্রলীগ যেন সবসময় নীতি বজায় রেখে রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নীতি-আদর্শ ছাড়া কখনো কোনো নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে না, জাতিকে কিছু দিতে পারে না। বঙ্গবন্ধুও ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে উঠে এসেছেন। কিন্তু তিনি একটা দেশ দিয়ে গিয়েছেন, স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছেন। কারণ উনার শক্তি ছিল সততার শক্তি, নীতি ছিল, সাহস ছিল। তিনি কখনো নীতির সঙ্গে আপস করেন নাই, যেটাকে তিনি সত্য বলে মনে করেছেন, সেটার জন্য তিনি সর্বদা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি রসিকতার সুরে বলেন, ছাত্রলীগ মুরব্বি প্রতিষ্ঠানের মতো। এটা আওয়ামী লীগের থেকে পুরনো সংগঠন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন আমার বাবা জেলে থাকতেন, তখন ছাত্রলীগ সব সময় যোগাযোগ রাখতেন মায়ের সঙ্গে। তিনি নির্দেশনা দিতেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ছাত্রলীগ কাজ করত। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর প্রথম প্রতিবাদটা ছাত্রলীগ ও অন্যান্য কিছু সংগঠন করেছিল। আমাকে এবং রেহানাকে বিদেশের মাটিতে রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছিল। নিজেদের পরিচয় দিতে পারতাম না। আমরা জানতাম না ভবিষ্যৎ আমাদের কী? কিন্তু তখন এই বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার যে দাবিটা উত্থাপন করে সেটাও ছাত্রলীগের মাধ্যমে প্রথম হয়। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য, অবদান এটা প্রত্যেক নেতা-কর্মীর মনে রাখা উচিত। সেটা মনে রেখেই তাদের আচার-আচরণ, কথাবার্তা, রাজনীতি সব কিছু করা উচিত যেন এই সংগঠনটা মর্যদাপূর্ণ হয়।

পুনর্মিলনীর আনুষ্ঠানিকতা : পুনর্মিলনীর মূল পর্ব শুরু হয় বেলা আড়াইটায়। গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেত হতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে এ পুনর্মিলনীতে যোগ দেন সারা দেশ থেকে জেলা-উপজেলা ও মহানগরের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে মূল প্যান্ডেল ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। বেলা ২টা ৩২ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। সংগঠনের সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। উত্তরীয় ও ব্যাজ পরিয়ে দেন ইশাত কাসফিয়া ইরা, বেনজির নিশি, জেসমিন শান্তা। পরে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয় এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ ক্রেস্ট তুলে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বই তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

ছাত্রলীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ শহীদুল ইসলাম, ইসমত কাদির গামা, বাহালুল মজনুন চুন্নু, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, আবদুল মান্নান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আবদুর রহমান, শাহে আলম, অসীম কুমার উকিল, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, ইকবালুর রহিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ইসহাক আলী খান পান্না, বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকন, লিয়াকত শিকদার, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসাইন।

ছাত্রলীগের নিজস্ব পরিবেশনায় ‘ধনধান্যে পুষ্পেভরা, আমাদের এ বসুন্ধরা’সহ কয়েকটি সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সংক্ষিপ্ত নাটিকা ছাড়াও প্রতিষ্ঠার গত ৭২ বছরে ছাত্রলীগের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম, সাফল্য নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। দেশাত্মবোধক গানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও গানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। অনুষ্ঠান থেকে সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পরিচয় তুলে ধরা হলেও সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নাম উচ্চারিত হয়নি।

সর্বশেষ খবর