সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের আরও সতর্ক থাকার এবং জুয়াড়িদের তৈরি এআই জেনারেটেড ডিপফেক ভিডিও দ্বারা প্রতারিত না হতে অনুরোধ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
সোমবার (১৬ জুন) এক বিবৃতিতে প্রেস উইং বলেছে, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে জুয়ার বিজ্ঞাপন নতুন নয়, তবে তারা একটি বিরক্তিকর মোড় নিয়েছে। এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশাল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে জুয়াড়িরা তাদের সাইটে জনসাধারণকে আকৃষ্ট করতে সংবাদ প্রতিবেদন এবং ভুয়া বিবৃতি অনুকরণ করতে এআই জেনারেটেড ডিপফেক ভিডিও তৈরি করছে।’
প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেকিং ফেসবুক পেজ সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এ বিবৃতিটি পোস্ট করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ হলো ফেসবুকে প্রচারিত একটি ডিপফেক ভিডিও, যেখানে অধ্যাপক ইউনূসকে একটি জুয়া অ্যাপের অনুমোদন দেওয়ার মিথ্যা দেখানো হয়েছে।
‘এই কারসাজি করা ফুটেজে ড. ইউনূস আর্থিক লাভের জন্য লোকেদের জুয়া খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফেসবুক ব্যবহারকারী জওফর হিবার্ট ভিডিওটি শেয়ার করেছেন, যেখানে ড. ইউনূসকে বলতে দেখা যাচ্ছে যে সরকার একটি অ্যাপ চালু করেছে যা ব্যবহারকারীদের তাদের বিনিয়োগের ওপর উল্লেখযোগ্য রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ভিডিওতে অধ্যাপক ইউনূসকে বলতে দেখা গেছে, ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবকদের একটি ছোট দলের সাথে আমাদের পণ্য পরীক্ষা করেছি। তাদের প্রত্যেকে প্রথম সপ্তাহে ৫,৫৫,০০০ টাকারও বেশি আয় করেছে। যদি আপনি প্রথম সপ্তাহে কমপক্ষে ৩৭,০০০ টাকা আয় না করেন তবে আমি আমার নিজের পকেট থেকে আপনার টাকা ফেরত দিতে প্রস্তুত।’ ‘এখন পর্যন্ত কেউই ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়নি।’
তবে তদন্তে জানা গেছে ভিডিওটি এআই-চালিত। রিভার্স ইমেজ সার্চ থেকে দেখা গেছে, ফুটেজটি আল জাজিরার টক টু আল জাজিরা প্রোগ্রাম থেকে নেওয়া হয়েছে, যা ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে প্রচারিত হয়েছিল এবং তাদের দোহা সদর দপ্তরে রেকর্ড করা হয়েছিল।
প্রকৃত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বাজি বা সরকার-চালিত কোনো বিনিয়োগ অ্যাপ সম্পর্কে কিছুই বলেননি।
পোস্ট করা ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে তদন্তকারীরা দেখতে পান যে এটি ১৪ জুন, ২০২২ তারিখে তৈরি করা হয়েছিল এবং লিথুয়ানিয়ায় অবস্থিত একাধিক ব্যবহারকারী দ্বারা পরিচালিত বলে মনে হচ্ছে।
অ্যাকাউন্টটিতে মাত্র চারটি পোস্ট রয়েছে, যার সবকটিই একটি জুয়া অ্যাপ প্রচার করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং এআই-সৃষ্টি করা। কণ্ঠস্বরটি রোবোটিক এবং ড. ইউনূসের আসল কণ্ঠস্বরের সাথে সেটার মিল নেই।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে অসংখ্য ডিপফেক ভিডিও প্রচারিত হয়েছে।
তাকে বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সমাধান হিসেবে গেমিং অ্যাপ প্রচার করতে মিথ্যাভাবে দেখানো হয়েছে। অন্যরা দাবি করেছেন যে, এই উদ্যোগটি ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য বা বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য নেওয়া হয়েছিল।
‘আরেকটি ডিপফেকে ড. ইউনূসকে ক্রেজি টাইম বাংলাদেশ নামে একটি বেটিং সাইট প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে। এটিও বানোয়াট।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্রেজি টাইম বাংলাদেশকে দেখানো কারসাজি করা ভিডিওতে ড. ইউনূসকে তার মুখপাত্র হিসেবে মিথ্যাভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বাস্তবে ভিডিওটি ডিজিটাল সম্পাদনা সরঞ্জাম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
কী ফ্রেমের বিপরীত চিত্র অনুসন্ধান ফেক কন্টেন্টটিকে ১০ আগস্টের একটি আসল নিউজ২৪ ইউটিউব ভিডিওর সাথে সংযুক্ত করে, যার শিরোনাম ছিল: ‘রংপুরকে এক নম্বর জেলা হতে হবে : ড. ইউনূস’।
নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর এটা স্পষ্ট যে ভুয়া জুয়ার বিজ্ঞাপনের দৃশ্য - ড. ইউনূসের পোশাক, পটভূমি এবং আশপাশের ব্যক্তিরা - আসল নিউজ২৪ ভিডিওর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের আরও সতর্ক থাকার এবং এ ধরনের ডিপফেক ভিডিও দ্বারা প্রতারিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন