বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনীতিকে টেকসই করা যাবে না, বাংলাদেশ এখন অর্থনীতিকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, টাকা না ছাপিয়ে, ঋণনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে বিনিয়োগমুখী বাংলাদেশ গড়ার কোনও বিকল্প নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে অনুষ্ঠিত বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলন ২০২৫-এর ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট : বিকাশ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেশনে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজন করে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, দেশে-বিদেশে নির্বাচনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বর্তমান বাংলাদেশ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রস্তুত।
এসময় বিএনপির এই নেতা বলেন, বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনীতিকে টেকসই করা যাবে না। আমরা সবাই মিলে সেই কাজটা করতে যাচ্ছি, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামীর বাংলাদেশের জন্য দেশি বিনিয়োগ, বিদেশি বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। পুঁজিবাজার ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীদের পণ্য ব্র্যান্ডিং করতে হবে, টেকনিক্যাল ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে হবে এবং বিশ্ববাজারে সরাসরি পৌঁছে দিতে হবে। বিনিয়োগই অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার একমাত্র টেকসই সমাধান।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. সাইফউদ্দিন, কনটেক্সচুয়াল ইনভেস্টমেন্ট এলএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকাও হিরোসে এবং এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ফান্ড ম্যানেজার রুচির দেশাই। সঞ্চালনা করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
ড. মাসরুর রিয়াজ জানান, বাংলাদেশ দেশীয় ও বিদেশি- উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীর জন্য উন্মুক্ত। অনেক সেক্টর আছে, যেগুলো অদূর-ভবিষ্যতে চাঙ্গা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, কৃষি খাত বিনিয়োগের জন্য নতুন এবং সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যেখানে প্রবৃদ্ধির বড় সুযোগ রয়েছে। এখানে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে। মাসরুর রিয়াজ আরো পূর্বাভাস দেন যে দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত দ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের শিল্প খাতে পরিণত হবে, যা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থানকে আরো মজবুত করবে।
বিশ্বের অনেক দেশে গণ-অভ্যুত্থান কিংবা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তবে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রম বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের পরও জিডিপিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। মূল্যস্ফীতি উল্টো হ্রাস পেয়েছে।
লুটপাট হওয়া পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে দাবি করে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক সাফল্যে এটা স্পষ্ট, দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। গত মাসে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের উত্থানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। যে পুঁজিবাজার একসময় লুটপাটের শিকার হয়েছিল, সেই বাজারে এক মাসে এমন উত্থান ঘটেছে। এটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
সরকারের লক্ষ্য ও প্রচেষ্টা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শক্তিশালী ও সুশাসিত পুঁজিবাজার গড়ার জন্য কাজ করছে। ‘তিন শূন্য’ : শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য অর্জনে এই প্রচেষ্টা।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন ভালো সুযোগ। আমাদের পুঁজিবাজারও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নয়, এই বার্তা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের কাছেও পৌঁছে দিতে চান বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেছেন, দেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশকিছু প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গত কয়েক মাসে নতুন কোনো আইপিও বাজারে আসেনি, যার ফলে অর্থের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, এটি বাজারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, অতীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ বাজারে বাধা সৃষ্টি করেছিল। তবে এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আরো বেশি ব্লুচিপ কম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা। গত চার বছরে শীর্ষ ২০টি তালিকাভুক্ত কম্পানি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে দামের বিষয়টি মুখ্য নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টেকসই উন্নয়ন।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা অংশ নেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ