বুধবার, ১৮ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে বিশ্বে

সাত হাজার ছাড়াল, বিভিন্ন শহরে কারফিউ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বাতিল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে বিশ্বে

বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭ হাজার ১২৫ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে ১ লাখ ৮২ হাজার ৪৭ জন।  করোনার মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে ইতিমধ্যে দেশে দেশে কারফিউ জারি ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি ও পুয়ের্তো রিকোতে এবং ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। নতুন করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে কয়েকটি দেশে। বাতিল হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক বৈঠক। তবে ইতালির অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশটিতে কয়েক দিন ধরে মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। অবশ্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭৮ হাজার ২০৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৫৮ জনে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৭ হাজার ৯৮০ জনে। ইতালিতে মৃত্যুর মিছিল বন্ধের চেষ্টায় রোমের পথে হাঁটলেন পোপ ফ্রান্সিস। চার্চে গিয়ে প্রার্থনাও করেছেন তিনি। ইতালির পরই স্পেনের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪২ জনে। এ ছাড়া মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৯৪২ জন। জরুরি অবস্থা জারির ফলে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের রাস্তায় আসা মানুষদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করছে পুলিশ। মেট্রো ট্রেনগুলোও সব জনশূন্য।  অন্যদিকে ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৬৫৩ জন। গতকাল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, আমরা এখন যুুদ্ধে আছি। তিনি জনগণের চলাফেরায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে তা অমান্য করলে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে অচলাবস্থা বাস্তবায়নে রাজপথে দেড় লাখ সৈন্য নামানোর ঘোষণা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ফলে চীনের জনশূন্য শহরের মতো রূপ পেয়েছে ফ্রান্সের প্যারিস। প্যারিসের যে সড়কে লাখো মানুষের চলাচল ছিল, জরুরি অবস্থা জারি করার পর সেগুলো এখন জনশূন্য। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ সব বন্ধ। অফিস-আদালত, ক্যাফে কিছুই খোলা নেই। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সোমবার থেকে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক ও লুক্সেমবার্গ সীমান্তে কড়াকাড়ি আরোপ করে জার্মানি। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে সাত হাজার ২৭২ জনে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করার কথা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের। যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য সরকার বয়স্কদের সেলফ আইসোলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। সে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি। করোনা আতঙ্কে নিত্যপণ্যের দোকানে গিয়ে বেশি বেশি কেনাকাটা করে মজুদ করছেন মার্কিনিরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত একসঙ্গে ১০ জনের বেশি এক স্থানে সমবেত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমেরিকার ৫০ অঙ্গরাজ্যে যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, তা আগামী গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হতে পারে। অন্যদিকে নিউজার্সির গভর্নর ফিল মাফি কারফিউ জারি করার ঘোষণা দিয়েছেন। সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় খুচরা বিক্রির দোকান, প্রমোদ ও বিনোদন ব্যবসা রাত ৮টার পর অবশ্যই বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নিউজার্সিতে সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রবিবার পুয়ের্তো রিকোয় রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ঝাং জুন জানিয়েছেন, পরিষদের একটি বৈঠক মঙ্গলবার হওয়ার কথা ছিল, এটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি সপ্তাহেই দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেগুলোও বাতিল করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে যাওয়ায় অন্য দেশগুলোও আতঙ্কিত। ইরানে এখন পর্যন্ত করোনায় ৮৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার। ইরানে মহামারী আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ৮৫ হাজার বন্দীকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিয়েছে ইরান। এর মধ্যে রাজনৈতিক বন্দীও রয়েছেন। করোনাভাইরাস আতঙ্কে জর্ডানের কারাগারে শুরু হয়েছে দাঙ্গা। এর ফলে মারাও গেছেন কয়েকজন। লেবাননের বৈরুতের সাগর সৈকতে থাকতে পারছেন না পর্যটকরা। সব ধরনের জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে ১০৯ জন আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। রাশিয়ায় করোনা মোকাবিলায় নতুন টাস্কফোর্স গঠন করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবেয়ানিনের নেতৃত্বে রবিবার থেকে কাজ শুরু করেছে এই টাস্কফোর্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৯৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সেখানে এখনো কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

পশ্চিমবঙ্গে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত : পশ্চিমবঙ্গে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খোঁজ মিলল কলকাতায়। লন্ডনফেরত এক তরুণের শরীরে মিলেছে করোনার সংক্রমণ। জানা যায়, লন্ডনে থাকাকালীন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই যুবক একটি পার্টিতে যান। পার্টিতে উপস্থিত কয়েকজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। অতি সম্প্রতি লন্ডন থেকে ফিরে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। কলকাতায় ফেরার পর ওই যুবকের শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সন্দেহ হওয়ায় দুই দিন আগেই তাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

করোনা আশঙ্কায় তার শরীরের নমুনা পাঠানো হয় পরীক্ষাগারে। তখনই নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ মেলে। তাকে আপাতত বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের স্পেশাল কোয়ারেন্টাইন কেবিনে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর