শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
নকল মাস্ক সরবরাহ

ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নকল মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ২৭ জুন ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মাহবুবুর রহমান গতকাল  বলেন, মামলায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, কার্যাদেশের বিপরীতে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ৩০ জুন প্রথম দফায় ১৩০০, ২ জুলাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ৪৬০ ও ১০০০ এবং চতুর্থ দফায় ৭০০ মাস্ক সরবরাহ করে। তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় পণ্য ‘সামগ্রিক গুণগতমানের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি’ বলে অভিযোগ করা হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের জন্য কর্তৃপক্ষ এন-৯৫ মাস্ক দেওয়ার কথা বললে তাদের নকল মাস্ক দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রথম ব্যাচের চিকিৎসকরা ডিউটি শুরু করার পর তাদের দেওয়া হয় ৮২১০ এন ৯৫ মাস্ক। তাতেও চিকিৎসকদের কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু তৃতীয় গ্রুপের চিকিৎসকরা কাজ শুরু করতেই বাধে বিপত্তি। তাদের দেওয়া হয় নকল এন-৯৫ মাস্ক। নকল মাস্কগুলোতে লেখা ভুল, লট নম্বর নেই। প্রকৃতপক্ষে আসল এন-৯৫ মাস্কের সঙ্গে নকল মাস্কও সরবরাহ করেছে কোম্পানি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, গত শনিবার যখন বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালকের নজরে আনা হয় তখন তিনি নকল মাস্কগুলো বদলে দেন। তিনি নতুন করে যেগুলো দেন সেগুলোও নকল ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোনো স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ছাড়াই নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে এসব কেনাকাটা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়নি, মান যাচাই না করে, যাচাই-বাছাই কমিটি ছাড়াই এসব কেনাকাটা সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীদের জন্য একেকটি গ্রুপে ৪৫ জন আবাসিক চিকিৎসক থাকেন। তাদের প্রত্যেককে পাঁচটি করে মাস্ক দেওয়া হয় সাত দিনের ডিউটি করার জন্য। তাদের প্রায় প্রত্যেকেই দুই থেকে তিনটি করে নকল মাস্ক পেয়েছেন। এরপর পরিচালককে জানানোর পর সেগুলো রিপ্লেস করে নতুন মাস্ক দেওয়া হয়, কিন্তু রিপ্লেস করা নতুন মাস্কও ছিল নকল। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শারমিন ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। শারমিন ২০১৬ সালের ৩০ জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে সরবরাহকারী নিজের ব্যবসা শুরু করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর