ঝাঁকড়া চুলভরা মাথায় জোরালো হেড। চোখের পলকে জাল স্পর্শ করল বল। হামজা চৌধুরী লাল-সবুজের জার্সিতে গোলের খাতা খুললেন। জামাল ভূঁইয়ার কর্নার কিক ছিল হামজার উদ্দেশ্যেই। সুযোগটা কাজে লাগালেন তিনি। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রায় ২০ হাজার দর্শক উল্লাসে ফেটে পড়লেন। বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন দিনের গল্প লেখার শুরুটা করলেন হামজা। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতোই জাগিয়ে তুললেন ঘুমন্ত ফুটবলকে!
সাধারণত ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ হলে দর্শকদের খবরও থাকত না। অতীতে এমন কত ম্যাচই না দেখা গেছে জাতীয় স্টেডিয়ামের সবুজ জমিনে। কিন্তু দিন বদলে গেছে! যেমনটা বদলে গেছে জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠ, গ্যালারি, প্রেসবক্স, কনফারেন্স রুম, জায়ান্ট স্ক্রিন। এসবের সঙ্গে বদলে গেছে বাংলাদেশের খেলার ধরনও। এখানে হামজা চৌধুরী আছেন। এখানে ফাহামিদুল আছেন। আরও আছেন তপু, জামাল, কিরমানিরা। রাকিব-মোরসালিনদেরও ভক্ত সংখ্যা কম নয়। এ কারণেই স্টেডিয়ামভরা দর্শক দেখা গেল গতকাল। হামজাদের ড্রিবলিং, পাসিং, অ্যাটাকিং, ট্রানজিশন, বিল্ড-আপে মুগ্ধতা ঝরে পড়ল। ফাহামিদুলের গতিতে ঝড় উঠল। ডিফেন্সে তপুরা নিজেদের কাজটা করে গেলেন। প্রথম ম্যাচ হিসেবে হামজা-ফাহামিদুলদের নিয়ে কম্বিনেশনে কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আগেই বলেছেন, কম্বিনেশন নিয়ে ভুটান ম্যাচে কিছুটা পরীক্ষা চালাবেন তিনি। গতকাল বেশ কয়েকটা পরিবর্তন এনে সেই পরীক্ষা করেছেন তিনি। এবার সিঙ্গাপুর ম্যাচের অপেক্ষা।
গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচের ম্যাজিক্যাল মুহূর্ত দেখা যায় ষষ্ঠ মিনিটে। জামালের ডান পায়ের কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের ভিতর থেকে হেডে বল জালে জড়ান হামজা। বাংলাদেশের জার্সিতে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই গোলের দেখা পেলেন তিনি। প্রথমার্ধে আরও বেশ কয়েকবার আক্রমণে গেলেও জামাল, রাকিব, ফাহামিদুলরা গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে হামজা-জামালদের উঠিয়ে নেন কোচ। ফাহামিদুলও ৬০তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন। তার আগে ৫০তম মিনিটে ফিরতি বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে গোল করেন সোহেল রানা। ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বেশ রয়ে সয়েই খেলেছে বাংলাদেশ। তারপরও সাদ উদ্দিন আঘাত পেয়ে স্ট্রেচারে উঠে মাঠ ছাড়েন। সিঙ্গাপুর ম্যাচে তাকে পাওয়া যাবে কি না বলা কঠিন!
ফুটবলের গুরুজনরা বলতেন, এক সময় এদেশের ফুটবলে কী সুদিনই না ছিল! সেসময় আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের টিকিট কেনার জন্যই মারামারি লেগে যেত। বাধা টপকে দর্শক মাঠে প্রবেশ করত। গেট ভেঙে দিত টিকিট না পেয়ে। সেই পুরোনো দিনের গল্পটাই যেন নতুন রূপে ফিরে এলো। এখন আর লাইন ধরে টিকিট কিনতে হয় না। অনলাইনে সময়মতো একটা ক্লিক করতে পারলেই টিকিট মিলে। তবে ভাগ্য সহায় না হলে এই টিকিট পাওয়া বড় কঠিন। যারা পাননি তারাই গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামের মূল ফটকের ব্যারিকেড ভেঙে দিয়েছেন। তাদের আগ্রাসি রূপ দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বরতরাও রণে ভঙ্গ দেন। খেলার সময় নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে মাঠে ঢুকেছেন দুজন দর্শক। এমন দৃশ্য নিশ্চয়ই নিন্দনীয়। কিন্তু ফুটবলের দৃষ্টিতে দেখলে, এটা দারুণ ব্যাপার। বাংলাদেশের ফুটবলে এমন দৃশ্য এ জীবনে দেখবেন বলে নতুনরা কখনো ভাবেননি। গুরুজনরাও ভাবেননি। সেই অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেল। আর ফলটাও তো দারুণ হলো। যদিও প্রতিপক্ষ ভুটান। কিন্তু এ ভুটানের কাছেই আগের ম্যাচে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেয়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা। দিন বদলের শুরুটা হলো সেই ভুটানের বিপক্ষে প্রতিশোধ নিয়ে।