দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় এই উৎসব ঘিরে রাজধানীর কোরবানির হাটগুলোতে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের কেনাবেচা। রাজধানীর শনির আখড়া, ধোলাই খাল, মোহাম্মদপুরের বসিলা, তেজগাঁও পলিটেকনিক-সংলগ্ন মাঠ ও গাবতলীসহ একাধিক পশুর হাট ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। আজ সকালবেলা তুলনামূলকভাবে পশুর সংখ্যা কম থাকলেও দুপুর গড়াতেই বাড়ছে সরবরাহ, সেই সঙ্গে বাড়ছে বিক্রিও।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই দিনের তুলনায় আজ হাটে পশু বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে ছোট গরুর চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে। শেষ মুহূর্তের এই কেনাকাটায় জমে উঠেছে কোরবানির হাটগুলো। তবে ক্রেতাদের ভাষ্য, এখনও পশুর দাম কিছুটা বেশি। তারা হাট ঘুরে দরদাম করেই পছন্দের কোরবানির পশু কিনছেন।
ঢাকার দোহার থেকে শনির আখড়া পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা ফুরকান জানান, তিনদিন হলো এখানে কোরবানির পশু নিয়ে এসেছি। আজ দেখছি ক্রেতা-বিক্রেতাদের চাপে জমে উঠেছে পশুর হাট। এখন সময়ের সাথে সাথে কেনাবেচা বাড়ছে। বিশেষ করে আজ বিকেলের পর প্রচুর ক্রেতাদের সমাগম দেখা যাচ্ছে। বিক্রিও বেড়েছে। দাম ভালো পেলে ঈদ উদযাপনে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে পারবো।
এদিকে, ধোলাই খাল পশুর হাটে কোরবানির গরু কিনতে আসা নিয়াজউদ্দিন জানান, গত কয়েকদিন বৃষ্টিতে কোরবানির পশুর কম সমাগম ছিল। শেষ মুহূর্তে এখন জমে উঠেছে হাট। হাটে যেমন দেখছি প্রচুর কোরবানির পশুর সরবরাহ, তেমনি আমার মতো ক্রেতাদেরও প্রচুর সমাগম দেখছি। আশা করছি পছন্দের কোরবানি পশুটি আজই কিনে নিয়ে যেতে পারবো।
হাটে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ বিকেলের পর থেকে হাট জমে উঠলেও কাল থেকে পুরোদমে বেচা-কেনা চলবে। ঈদের আগের দু’দিন বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ও শুক্রবার (৬ জুন) মূল বেচাকেনা হবে। তবে গত কয়েকদিন ক্রেতাদের সমাগম কম থাকলেও আজ থেকে প্রচুর ক্রেতা দেখা যাচ্ছে হাটে। সময়ের সাথে সাথে বিক্রিও বাড়ছে।
এদিন রাজধানীর গাবতলী কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত গেট পেরিয়ে পাশে ইট-বালুর মাঠ ও সড়ক পর্যন্ত ত্রিপল টাঙিয়ে রাখা হয়েছে পশু। ভেতরে এবং বাইরে দুই স্থানেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। হাটে প্রবেশের মূল ফটকে ক্রেতাদের সমাগম দেখা গেছে। বিকালের পর দেখা যায়, কেউ পছন্দের গরু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন, কেউ আবার কোরবানির পশু কিনতে হাটে ঢুকছিলেন।
রাজধানীর একাধিক কোরবানির হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে এবার চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ গরু এসেছে। ঈদের শেষ সময়ে আজ হাটে সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু প্রবেশ করেছে। তবে পশুর আমদানি বেড়েছে বলেই দাম যে কমেছে, এমন নয়। ক্রেতাদের অভিযোগ, কোরবানির পশুর দাম যেমন তেমন, হাট থেকে পশু বাড়ি নেওয়ার খরচ এখন আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে পিকআপ ভাড়া অতীতের তুলনায় অনেক বেশি।
সরেজমিন ঘিরে দেখা যায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীর গাবতলী, শ্যামপুর ও শনির আখড়ার হাটগুলোতে পশুর সরবরাহ থাকলেও দাম ও বিক্রির বিষয়ে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু তুলনামূলক ভালো দামে বিক্রি হলেও বড় গরুর ক্রয়-বিক্রয়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে, যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে হাটগুলোতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার মানি এস্কটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ব্যাপারীরা যে হাটে পশু নিতে চাচ্ছে- সেই হাটেই পশুর ট্রাক নিতে সহায়তা করছে ডিএমপি। জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯-এ ফোন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর বেশিরভাগ হাটেই সিসিটিভি, মেডিকেল টিম, ভেটেরিনারি সেবা, মাইকিং ও মল-মূত্র ব্যবস্থাপনাসহ বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি মিলিয়ে মোট ২১টি স্থানে পশুর হাট বসানো হয়েছে। প্রতিটি হাটেই বিক্রি হচ্ছে গরু, ছাগল ও ভেড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির কোরবানির পশু। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, শেষ মুহূর্তে হাট আরও জমবে, বিক্রিও বাড়বে এবং এবারের ঈদেও কোরবানির পশুর বাজার শেষ হাসি হাসবে।
বিডি-প্রতিদিন/শআ