আর কয়েকদিন পরেই মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে কুড়িগ্রামে জমে উঠেছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। জেলার বিভিন্ন খামারে গরু ও খাসি বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে, যা ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্বচ্ছ ও ভেজালমুক্ত পদ্ধতিতে লালন-পালন করা এসব পশু দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন জেলার ভেতরের পাশাপাশি বাইরের জেলার ক্রেতারাও।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের খামারিরা এবার তাদের নিজস্ব চাষ করা প্রাকৃতিক খাবার- ঘাস, খড়, ভুট্টা ইত্যাদি দিয়ে পশু মোটাতাজা করেছেন। কোনো রকম হরমোন, ওষুধ বা ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে গরু ও খাসি লালন-পালন করা হয়েছে। ফলে ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে এই খামারগুলোর ওপর।
জেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলার ৯টি উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ শতাধিক খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৪২টি গরু এবং ১ লাখ ৫৫ হাজার খাসি ও ভেড়া। জেলার চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার পশু, ফলে এবার প্রায় ৫৭ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে, যা অন্য জেলায় সরবরাহ করা হবে।
কুড়িগ্রাম সদরের ত্রিমোহনী এলাকায় অবস্থিত ‘অ্যাপোলো ইন্টিগ্রেটেড এগ্রো ফার্ম’–এ চলছে পুরোদমে গরু-খাসি বিক্রি। ফার্মের শ্রমিক নূর হোসেন বলেন, “আমাদের খামারে কোনো ওষুধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার হয়নি। পুরোপুরি প্রাকৃতিক খাবারে লালন-পালিত গরু ও খাসি বিক্রি করছি কেজি দরে। এটা এখন ক্রেতাদের কাছে খুব জনপ্রিয়।”
এই খামার থেকেই গাজীপুর থেকে এসে ৭টি পশু কিনেছেন মতিয়ার রহমান নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, “বাজারে গেলে দালালের জ্বালায় ঠিকঠাক পশু কেনা যায় না। এখানে এসে কেজি দরে ওজন করে পশু কিনতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে।”
ফার্মের সহযোগী মালিক লতিফুর রহমান জানান, “আমাদের ফার্মে প্রায় ১০০টি গরু এবং শতাধিক ছাগল রয়েছে। গরু কেজি প্রতি ৪৫০ টাকা ও ছাগল ৫৭০ টাকা দরে বিক্রি করছি। লাইভ ওয়েটে পশু বিক্রির ফলে ক্রেতারা স্বচ্ছভাবে বুঝে কিনতে পারছেন, এতে তারা সন্তুষ্ট।”
কোরবানির পশুর কেনাবেচা নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ২৯টি পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যাত্রাপুর, কাঁঠালবাড়ি, উলিপুর, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন হাটে শেষ মুহূর্তে পশু নিয়ে যাচ্ছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া জেলার খামারগুলোতে পশু পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনায় যুক্ত রয়েছেন অনেক কর্মজীবী মানুষ, ফলে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী কর্মসংস্থান। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, “স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর কুড়িগ্রামের পশু দেশের অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ করা হবে। এ বছর পশুর খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পশু, তবে সেটা স্বাভাবিক।”
বিডি প্রতিদিন/মুসা