শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

মাস্ক না দিয়েই ৯ কোটি টাকা নিয়ে গেছে জাদিদ অটোমোবাইলস

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভুয়া করোনা টেস্ট ও সনদ বাণিজ্য, নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের সমালোচনার মধ্যে বেরিয়ে এসেছে আরেক অনিয়মের খবর। অটোমোবাইল কোম্পানিকে মাস্ক ও পিপিই সরবরাহের কাজ দেওয়া হলে সেই কোম্পানি সরঞ্জাম সরবরাহ না করেই তুলে নিয়ে গেছে ৯ কোটি টাকা। আবার সেই  কোম্পানির দেওয়া অফিশিয়াল ঠিকানায় গিয়ে কোনো কার্যালয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে পিপিই-মাস্ক-গ্লাভস সরবরাহ করার কথা থাকলেও ৮৪ দিন পর্যন্ত একটি পণ্যও সরবরাহ করা হয়নি। অথচ ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিটি। এমন কান্ড ঘটিয়েছে জাদিদ অটোমোবাইলস নামের একটি কোম্পানি। এসব বিষয়ে জাদিদের মালিক যেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি, তেমনি প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাছেও মেলেনি এ সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের উত্তর। করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন পায় ‘কভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি)’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ-৮৫০ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এই প্রকল্পেই ৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকার পিপিই সরবরাহের কাজ পায় জাদিদ অটোমোবাইলস। জানা গেছে, ১৯ মে ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় জাদিদ অটোমোবাইল নামের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি হয় সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের। চুক্তিনামা অনুযায়ী ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় জরুরি ভিত্তিতে ৫০ হাজার পিস কাভারঅল পিপিই, ৫০ হাজার পিস কেএন-৯৫ মাস্ক, ৫০ হাজার পিস এন-৯৫ মাস্ক ও ১ লাখ পিস হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহের অনুমতি পায় জাদিদ অটোমোবাইলস। এর জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ৪৫ দিন। তবে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৮৪ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো একটি সুরক্ষা সরঞ্জামও সরবরাহ করতে পারেনি বলে জানা গেছে। অথচ ৩০ জুনের আগেই জাদিদ অটোমোবাইলস প্রকল্প থেকে সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে! এ কোম্পানির চুক্তিনামাতেও বেশকিছু অসঙ্গতি দেখা যায়। এতে জাদিদ অটোমোবাইলসের ৫০ হাজার পিস কাভারঅল পিপিই সরবরাহের কথা থাকলেও সেটি কোন লেভেলের হবে তা উল্লেখ নেই। অথচ স্বাস্থ্য খাতের সব প্রকল্পেরই পিপিই সরবরাহের ক্ষেত্রে মানের বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ থাকে। চুক্তিনামায় জাদিদের সঙ্গে প্রকল্পের আর্থিক লেনদেন অংশেও অসঙ্গতি দেখা যায়। যেমন বলা হয়েছে, চুক্তি সইয়ের পর ১৫ দিনের মধ্যে আগাম অর্থ দেওয়া হবে জাদিদকে। এর পরিমাণ কথায় লেখা আছে ২০ শতাংশ, অঙ্কে ৩০ শতাংশ। আবার পণ্য সরবরাহ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধের কথা বলা আছে কথায় ৭০ শতাংশ, অঙ্কে ৬০ শতাংশ। চুক্তিনামায় প্রকল্প পরিচালকের নামও উল্লেখ করা হয়নি। এই চুক্তিনামার ভিত্তিতেই জাদিদ সাড়ে ৯ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে সুরক্ষা সরঞ্জামগুলো সরবরাহের জন্য। তবে চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিন তো দূরের কথা, ৮৪ দিনে তারা একটি পণ্যও সরবরাহ করতে পারেনি।

তবে ১৪ এপ্রিল জাদিদ অটোমোবাইলসের মালিক শামীমুজ্জামান কাঞ্চন দাবি করেন, ৭০ শতাংশের মতো পিপিই তারা সরবরাহ করেছেন। তবে এসব পণ্য  কোথায় সরবরাহ করা হয়েছে সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (সিএমএসডি) বলছে, এই প্রকল্পের আওতায় কোনো সুরক্ষাসামগ্রী তারা বুঝে পায়নি।

সর্বশেষ খবর