বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ঋণ সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঋণ সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখা হবে

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিগত অর্থবছরে রপ্তানি ও আমদানি হ্রাস পেলেও প্রবাস আয়ের প্রবাহ ভালো থাকায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। দেশের উৎপাদন  সক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ পূর্বের ন্যায় নির্বিঘ্ন রাখতে আমরা সক্ষম হব। গতকাল জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২০) বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী সংসদে এ প্রতিবেদন উত্থাপন করেন। সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, করোনার প্রভাবে সরকারি ব্যয় ৭.৫৭ শতাংশ কমেছে। তবে সামনের দিনগুলোতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক (-২.৯৪ শতাংশ)। আমদানি ঋণপত্র খোলা হ্রাস পেয়েছে ৮.৯ শতাংশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাও কিছুটা শ্লথ হয়েছে। গড় মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫.৬৯ এবং পয়েন্ট টু পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫.৯৭ শতাংশে। তবে এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১১ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী এ সময় বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিপর্যয় হতে ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। কভিড মোকাবিলায় সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। করোনা মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা থেমে নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন, করেনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।

এর মোট পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। জিডিপির ক্রমাগত হারে বেড়েছে। কভিড-১৯-এর কারণে কিছুটা শ্লথ হয়েছে। তারপরও এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে আমাদের জিডিপি অনেক ভালো। বর্তমানে জিডিপি ৫.২৪ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে, বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৬ মার্কিন ডলার। আমাদের রপ্তানি আয় ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৩ হাজার ৫৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত পরিলক্ষিত হয়েছে। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবে ৭১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি ছিল। বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে।

করোনায় বৈশ্বিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা কিছুটা শ্লথ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমাদানি ব্যয় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ হয়েছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫.৯৭ শতাংশে। বিপরীতে রাজস্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ, প্রবাস আয় পৌঁছৈছে ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশে, রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে সরকারি ব্যয় হয়েছে ৬২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। যা বাজেটের ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এ সময় ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থ বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় মোট ব্যয় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় ২৬ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং পরিচালন ব্যয় ১ দশমিক ২৮ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় ১১.৪৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১২.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। মূলত মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।

সর্বশেষ খবর