শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শঙ্কা কমাতে বাড়ছে অক্সিজেন উৎপাদন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

শঙ্কা কমাতে বাড়ছে অক্সিজেন উৎপাদন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন অর্ধশতের বেশি মানুষ। আক্রান্তদের অনেকেরই দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের জরুরি উপাদান অক্সিজেন। রোগী বাড়ায় দেশে বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। পাশের দেশ ভারতে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে মানুষ। তাই দেশে অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা কমাতে মজুদ রাখা হচ্ছে অক্সিজেন, বাড়ানো হচ্ছে উৎপাদন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘দেশে বর্তমানে সাধারণ ও কভিড রোগী মিলিয়ে দৈনিক ৭০-৮০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পিক সময়ে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ ২১০ টন। এ মুহূর্তে দেশে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টন। তবে আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে অক্সিজেন সংকটের কারণে বর্তমানে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। যে কোনো সময় একই রকম অবস্থা যাতে আমাদের দেশে না হয় সে জন্য সরকারিভাবে আপৎকালীন সময়ের জন্য এ মুহূর্তে দেশে প্রায় ৯০০ টন অক্সিজেন মজুদ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে আরও ৪৫০ টন অক্সিজেন মজুদ রয়েছে। আগামী মাসে একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি প্রস্তুতি ও জরুরি অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অক্সিজেনের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে বেশির ভাগ সরবরাহকারী ইতিমধ্যে শিল্প-কারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। উৎপাদিত অক্সিজেনের সবটুকুই করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোতে দিয়ে দিচ্ছে তারা। হাসপাতাল সূত্র বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনার সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন স্ট্রেইনগুলো অতিমাত্রায় সংক্রামক হওয়ায় রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে বেশিসংখ্যক রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘আমরা অক্সিজেন সংকটে পড়িনি। রোগী কমে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা কমেছে। হাসপাতালে তিন শ’র বেশি শয্যা ফাঁকা আছে। এ হাসপাতালে এখন প্রতিদিন প্রায় দুই-তিন হাজার লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। এখন পর্যন্ত চাহিদামাফিক অক্সিজেন পেয়েছি।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দেশের হাসপাতালগুলোতে এখন দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১৮০ টন। এর মধ্যে বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘লিন্ডে বাংলাদেশ’ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে ৯০ টন। স্পেক্ট্রা নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক গড়ে সরবরাহ করছে ২৪ দশমিক ৫ টন এবং ইসলাম অক্সিজেন সরবরাহ করছে ৪০ টন। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে তারা ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করে। তবে ভারত ২২ এপ্রিল থেকে অক্সিজেন রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২১ এপ্রিলের আগে এক সপ্তাহে ৪৯৮ মেট্রিক টন অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। এরপর আর অক্সিজেনের চালান আসেনি। তাই পরিস্থিতি সামলাতে অক্সিজেন উৎপাদন বাড়ানোয় জোর দিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রতিদিন প্রায় ২৭০ টন অক্সিজেন উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় রোগীর খারাপ অবস্থা হলে অক্সিজেন মূল ভূমিকা পালন করে। এ কারণে অতি দ্রুত দেশের সরকারি ১৩০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ১৩০টি হাসপাতালের মাধ্যমে এখন প্রায় ১৬ হাজার শয্যায় অক্সিজেন বেড কভিড রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০০টি আইসিইউ বেডে মানুষ এখন কভিড চিকিৎসা নিচ্ছে। শিগগিরই সেখানে আরও ১০০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর