মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

নায়িকা পরীমণির মামলায় জাতীয় পার্টির নেতাসহ পাঁচজন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নায়িকা পরীমণির মামলায় জাতীয় পার্টির নেতাসহ পাঁচজন আটক

ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমণির করা মামলার প্রধান আসামি নাসির ইউ মাহমুদ, তুহিদ সিদ্দিকী অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল বেলা ৩টার দিকে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার বাকিরা হলেন লিপি, সুমি ও স্নিগ্ধা। রবিবার রাতে রাজধানীর বনানীর বাসায় সংবাদ সম্মেলনের পর গতকাল সাভার থানায় মামলা করেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। ওই মামলায় সাভার থানার অনুরোধেই নাসির ইউ আহমেদসহ বাকিদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবির (উত্তর) যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে মাদকও জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেছেন, আসামিদের গ্রেফতারে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।

হারুন অর রশীদ বলেন, তিনজন নারীসহ ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করছিলেন নাসির ইউ মাহমুদ। কম বয়সী মেয়েদের নিয়ে তিনি ফুর্তি করেন এমন অনেক মৌখিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এই ফ্ল্যাটে অনেকদিন ধরেই ডিজে পার্টি হতো। এখন লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই অভিযোগ এসেছে অমির বিরুদ্ধে। সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে মাদক জব্দ হওয়ায় মাদক আইনে মামলা হবে। এই মামলায় প্রয়োজনে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাদের।

পরে সন্ধ্যায় তার নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনারের বরাত দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, রাত ১০টার পর কোনো বার কিংবা নাইট ক্লাবে কোনো নারী যেতে পারবে না। এমন অভিযোগ পেলে সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হবে।

জানা গেছে, নাসির ইউ আহমেদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি। ঢাকা বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক। গ্রেফতারের আগে নাসির ইউ মাহমুদ বলেন, সেদিনের ঘটনায় প্রতিবেদন ক্লাবকে দেওয়া হয়েছিল। পরের দিনই আমাদের ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী রিপোর্ট করা হয়েছে। আমাদের স্টাফরা লিখিতভাবে সব রিপোর্ট দিয়েছে। সেদিন পরীমণি জোর করে দামি মদ নিতে গেলে বাধা দিয়েছিলেন তিনি, তাতে এই অভিনেত্রী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন।

নাসির আরও বলেন, তারা তো নিতে পারেন না, তারা তো মেম্বার নন। আমি জাস্ট তাদের বাধা দিয়েছি, এটা নেওয়া যাবে না। এটা বিক্রিযোগ্য নয়। এরপরই তিনি (পরীমণি) উত্তেজিত হয়ে যান। তারপর তিনি আমাকে গালাগালি শুরু করেন। আমার স্টাফরা তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। পরীমণির সঙ্গীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন বলেও পাল্টা অভিযোগ নাসির ইউ মাহমুদের।

অন্যদিকে, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেছিলেন, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার ঢাকা সার্কেল অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সাভার মডেল থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। পরীমণির করা মামলায় মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিরা অজ্ঞাতনামা।

পরীমণি রবিবার রাতে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের জানান, গত ৮ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হন। বন্ধুটি তাদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজনের সঙ্গে পরীমণির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তার মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় মারধর করা হয় পরীর সঙ্গে থাকা জিমিকেও। তিনি দাবি করেন, জিমির মাধ্যমেই তার অমির সঙ্গে পরিচয় হয়। দুই বছর ধরে তারা ভালো বন্ধু। মূলত জিমিকে তার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যই তারা উত্তরার দিকে গিয়েছিলেন। আর অমির পরামর্শেই তারা ওই রাতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করেন। 

চিত্রনায়িকা পরীমণির অভিযোগ, ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তার অভিযোগ রেকর্ড করেননি। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার এবং সকালে এসে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এ সময় পুলিশের সাহায্যে পরীমণি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। এ ঘটনায় মারাত্মক ভেঙে পড়েছেন পরীমণি। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

এরপরই এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, থানায় অবস্থানের সময় পরীমণি স্বাভাবিক ছিলেন না। নেশাগ্রস্ত ছিলেন। থানার সিসিটিভি ফুটেজেও এই দৃশ্য সংরক্ষিত রয়েছে। তাকে পরদিন স্বাভাবিক অবস্থায় থানায় গিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি আর থানায় যাননি।

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, মঙ্গলবার রাতে ‘৯৯৯’ এ কল করেন পরীমণি। কল লোকেশন অনুযায়ী তার অবস্থান ছিল গুলশান এলাকায়। তবে রবিবার সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে পরীমণি অভিযোগ করেন, তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ সম্বোধন করে বিচার দাবি করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর