বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকা হলো বিচ্ছিন্ন

বন্ধ হয়েছে ট্রেন লঞ্চ বাস, রাজধানীর প্রবেশমুখে কঠোরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা হলো বিচ্ছিন্ন

সাত জেলায় কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। ছবিটি গতকাল গাবতলী আমিনবাজার এলাকা থেকে তোলা -রোহেত রাজীব

হঠাৎ বেড়ে যাওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় কঠোর বিধিনিষেধে (লকডাউন) রাজধানীর প্রবেশমুখে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গতকাল কঠোর বিধিনিষেধের প্রথমদিন দূরপাল্লার কোনো পরিবহন রাজধানীতে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি। রাজধানী থেকে কোনো পরিবহন বাইরে যেতেও দেওয়া হয়নি। রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। হঠাৎ ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণায় দূরপাল্লার যাত্রীরা বেশ ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকেই ঢাকার প্রবেশমুখ দিয়ে ১০-১৫ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে বিভিন্ন পরিবহনে ওঠেন। আবার ঢাকার বাইরে থেকে অনেকে হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করেন। অসুস্থ রোগীকে নিয়ে অনেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গতকাল ভোর ৬টা থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এ নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-আরিচা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক দিয়ে ঢাকার আমিনবাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি গণপরিবহন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। কর্দমাক্ত পথে হেঁটে, বৃষ্টিতে ভিজে, চরম দুর্ভোগ সঙ্গী করে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রাজধানীতে পৌঁছেন হাজারো মানুষ। এদের বেশিরভাগই কর্মস্থল যাত্রী। সকাল থেকেই সাভারের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে এই চিত্র। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, বলিয়ারপুর ও আমিনবাজারে দায়িত্বরত পুলিশ গতকাল রাজধানীতে কোনো গণপরিবহন প্রবেশ করতে দেয়নি। ফলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেঁটে রাজধানী পৌঁছে মানুষ। সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও ছিল জনস্রোত। সড়কে যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দীর্ঘ যানজটও দেখা গেছে ঢাকাগামী লেনে।

রাজধানীতে বেসরকারি অফিসে কর্মরত আশিক বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে বাসে আমার অফিসে যাই। আজ সকালে বের হয়েছি, হেমায়েতপুরের পরই বাস থেকে আমাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে হেঁটেই অফিসে যেতে হয়েছে। সঙ্গে ছাতা না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছি। অফিসে পৌঁছতেও দেড় ঘণ্টা দেরি হয়েছে।’

সাভার জোনের ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আবদুস সালাম বলেন, ‘সকালেই ডিএমপি থেকে পরিবহন ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। উল্টো পথে কোনো পরিবহন যাতে ঢুকতে না পারে তার জন্য সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা কোনো পরিবহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেইনি।’ ডেমরা ট্রাফিক জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিষ্ণু শর্মা বলেন, ‘নির্দেশনা রয়েছে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে পারবে না এবং কোনো বাস ঢাকায় ঢুকতেও পারবে না। আমরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি। মূলত ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী যানবাহন ছাড়া দূরপাল্লার বাস চলছে না। দু-একটি বাস চলে আসলে আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি।’

যাত্রীবাহী নৌ চলাচল বন্ধ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা থেকে সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল ভোর ৬টা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক যাত্রী বিষয়টি জানেন না। এ কারণে তারা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে ফিরে গেছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু যাত্রী লঞ্চ না পেয়ে টার্মিনাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন। বেশ কিছু লঞ্চ সরিয়ে অন্যত্র নোঙর করা হয়েছে। গতকাল সাভারের জিরাবো থেকে আসা রহিমা বেগম জানান, ‘আমি বরগুনা যাব। বেলা ১টার দিকে টার্মিনালে এসে শুনি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তাই গন্তব্যে যেতে না পেরে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’ ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে ৮১টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গতকাল ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বন্দরে ৪৯টি লঞ্চ এসেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের প্রচার সম্পাদক ও সালাউদ্দিন গাজী লঞ্চের মালিক বাবু গাজী বলেন, করোনার কারণে ঢাকাসহ সারা দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোলা ও শরীয়তপুর রুটে তার দুটি লঞ্চ যাওয়ার কথা ছিল। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেগুলোও বন্ধ রাখা হবে। নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে ঢাকা নদীবন্দরসহ সারা দেশে যাত্রীবাহী নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।’

যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ : করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঢাকা থেকে দেশজুড়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল রাত ১২টার পর থেকে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধের সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়া ঢাকার সঙ্গে সারা দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঢাকার সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল চালু হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টার পর ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হচ্ছে। ঢাকা থেকে কোনো ট্রেন পরিচালনা করা হবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার ঢাকার আশপাশের ৪ জেলাসহ যে ৭ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোতে আন্তনগর ট্রেন থামেনি। গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ট্রেনের মোট আসনের ৫০ শতাংশ যাত্রী খালি রেখে ২৪ মে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

দোকান খোলা রাখায় জরিমানা, ছবি তোলায় সাংবাদিকদের মারধর: নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পাগলায় লকডাউনে কাপড়ের দোকান খোলা রাখায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত পাগলা বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতিকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এসময় দুই সাংবাদিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে তাদেরকে মারধর করে মোবাইল, ক্যামেরা ও  নগদ টাকা লুটে নেয়া হয়। গতকাল বিকেলে পাগলা বাজারে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাদের মারধর করে ক্যামেরা,মোবাইল ও টাকা লুটে নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছে টাকা না দিলেই দুই সাংবাদিক ব্যবসায়ীদের হয়রানী করেন। দুটি অভিযোগই তদন্ত করে ব্যবস্তা নেয়া হবে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে লকডাউনের প্রথম দিনেই ঢাকা আরিচা মহাসড়কে কোনো যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করেনি। তবে পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। কঠোর বিধিনিষেধের কারণে শহরের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকে। তবে কিছু কিছু দোকানপাট খোলা দেখা যায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে প্রয়োজনীয় ফেরি দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক অ্যাম্বুলেন্সসহ  জরুরি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন পারাপার করা হয়। নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল।

 

নারায়ণগঞ্জ : ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বহির্গমন ঠেকাতে জেলার ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয় জেলা প্রশাসনের  ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রায় ৩০টি টিম ১০টি বিশেষ পয়েন্টে ও ২০টি সাধারণ পয়েন্টে কাজ করেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ চেষ্টাকালে প্রায় সাত শতাধিক যানবাহনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ড, সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, ভুলতা, মেঘনা ঘাট, কাচপুর, আড়াইহাজার মদনগঞ্জসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের মোবাইল টিম ও পুলিশের টিম কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সেখানে ঢাকা থেকে ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও গণপরিবহনে করে আসা যাত্রীদের লকডাউনে বের হওয়ার কারণ নির্ণয় করা হয় এবং তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৭ শতাধিক নারায়ণগঞ্জমুখী যানবাহন ফিরিয়ে দিয়েছেন লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের ফতুল্লার পঞ্চবটি, পাগলা পোস্তগোলা, মুন্সীগঞ্জের মোক্তারপুর ও আদমজী সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে পুলিশের ব্যারিকেড পোস্ট। সেখানে মানুষের চলাচলের কারণ জিজ্ঞাসা করে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে  নয় দিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউন কার্যকর করতে সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ অবস্থান নেয়। পুলিশ শহরে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা ফিরিয়ে দেয়। কোনো ইজিবাইক বা রিকশায় একাধিক যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে তাদের সতর্ক করা হয়। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে শহরে কিছুসংখ্যক ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করেছে। এ ছাড়া লকডাউন কার্যকর করতে জেলা প্রশাসন একাধিক মোবাইল কোর্ট চালু রাখে। তারা নির্দেশনার বাইরে কোনো কাজ কেউ করলে তাদের তাৎক্ষণিক বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা করেছেন। এ ছাড়া জেলা তথ্য অফিস করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারণা চালায়। শহরের প্রধান কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও তুলনামূলকভাবে ক্রেতা ছিল কম।

টাঙ্গাইল : লকডাউন উপেক্ষা করে টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বাস। এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে জেলার করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল থেকে টাঙ্গাইল ও এলেঙ্গা পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নতুন বাসটার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বাস। গতকাল সকালে পৌর এলাকার নতুন বাসটার্মিনাল থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন গন্তব্যের দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়। পরিবহন কর্মীরা বলেন বাস বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। তাই তারা গাড়ি চালাচ্ছে। এদিকে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে গতকাল শহরের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো বন্ধ ছিল। তবে কিছু কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করেছে।

গাজীপুর : গতকাল ভোর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় জেলার সব প্রবেশদ্বার। করোনা সংক্রমণ রোধ জরুরি সেবা, পণ্যবাহী যান, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল সকালে রাস্তায় নেমে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী  লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অনেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। সকালে বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চন্দ্রা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় দিয়ে কিছু কিছু দূরপাল্লার গাড়ি ও আঞ্চলিক রোডে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব পয়েন্ট দিয়ে যানবাহন চলাচল কমে যায়। গণপরিবহন কম হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন কর্মস্থলে যাওয়া  লোকজন। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মহাসড়কের পাশে জটলা করেন। এক সময়ে বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে যানবাহনে, আবার কাউকে হেঁটে চলাচল করতে দেখা  গেছে। শিল্প অধ্যুষিত এ এলাকায় প্রায় দুই সহস্রাধিক রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প কলকারখানা রয়েছে। গতকাল জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনে কোনো ট্রেন না থামায় অনেক যাত্রী বিপাকে পড়েন। এ ছাড়াও বন্ধ থাকে গাজীপুর থেকে কমলাপুর রুটে চলাচল করা তুরাগ, ডেমো ও কালিয়াকৈর কমিউটার ট্রেন। অনেক যাত্রী স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে ফিরে গেছেন। জয়দেবপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন চলাকালীন গাজীপুর জংশনে মঙ্গলবার থেকে কোনো ট্রেন থামবে না।

মাদারীপুর : লকডাউনের প্রভাবে মাদারীপুর থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো যাত্রীবাহী পরিবহন। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেক পোস্ট বসিয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন। মাদারীপুর পুলিশ সুপার গোলাম মস্তফা রাসেল বলেন, ‘বিভিন্ন হাটবাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না থাকে সেদিকে খেয়াল রেখে পুলিশ কাজ করছে। এ কারণে রাস্তাঘাট, হাটবাজারে লোক সমাগম কমে এসেছে।’ মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বয়ে মাঠে একাধিক ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে। তারা সাধারণ মানুষকে সচেতন করছে। এ ছাড়াও ক্ষেত্র বিশেষে আইন অমান্য করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তিও দেওয়া হবে।’

চাঁদপুর : লঞ্চ চলাচল হঠাৎই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাঁদপুরের যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। দূরপাল্লার বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল সকাল ৬টা থেকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে শিডিউলে থাকা সব লঞ্চ বন্ধ করে দেয়। দুপুরে লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে কোনো লঞ্চ নেই। ভোর ৬টার আগেই ঘাট থেকে সব লঞ্চ নিরাপদ স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে। পুরো ঘাট ফাঁকা। লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত যাত্রীদের ফিরিয়ে দেন। এর পরও অনেকে লঞ্চ বন্ধের খবর না জেনে ঘাটে চলে আসেন। আবুল হোসেন ও মহিউদ্দিন নামে যুবক কচুয়া থেকে এসেছেন লঞ্চে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে। তারা ঘাটে এসে জানতে পারেন ভোর থেকে সব লঞ্চ বন্ধ। তারা বলেন, রাতে জেনেছি ৭ জেলায় সব বন্ধ। চাঁদপুর থেকে বন্ধ তা জানা ছিল না।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর