বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ পাশে ছিল বলেই সরকারের অর্জন সম্ভব হয়েছে : শেখ হাসিনা

দলের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ পাশে ছিল বলেই সরকারের অর্জন সম্ভব হয়েছে : শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় গতকাল ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশক : সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক’ শীর্ষক তথ্যচিত্র গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী দল পাশে আছে বলেই সরকারের সব অর্জন সম্ভব হয়েছে। উন্নয়ন কোনো ম্যাজিক নয়, আমাদের পরিকল্পনা। এজন্য শুধু সরকার হলেই হয় না, পাশে শক্তিশালী সংগঠন থাকতে হয়।

গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত দলের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

আলোচনা সভার শুরুতেই মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, ’৭৫-এ ঘাতকের হাতে সব শহীদসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত সব শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের সম্পাদনায় ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশক : সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক’ শিরোনামের বিশেষ স্মারকগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে চিন্তা করলে বাংলাদেশে একটি মাত্র মূল দল রয়েছে। সেটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আমার দৃঢ়বিশ্বাস দলের মধ্যে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো ও গণতন্ত্রের চর্চা অটুট থাকলে কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলের মানুষকে নিয়েই আওয়ামী লীগ। কমিউনিস্ট পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল আছে। কিন্তু মূল একটা দলই, সেটা আওয়ামী লীগ। বিএনপি বা জাতীয় পার্টি তো জনগণ থেকে উঠে আসেনি। ক্ষমতা দখলকারীর হাতে সৃষ্টি করা দল। সমালোচকদের এটা মনে রাখা উচিত। তিনি বলেন, আইয়ুব খান যেভাবে ক্ষমতা দখল করেন, জিয়াউর রহমানও একইভাবে ক্ষমতায় আসেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম ও রক্ত দিয়েছে একমাত্র আওয়ামী লীগ। তারা রক্ত দিয়েছে বলেই আজ গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। সত্যিকার গণমানুষের দল একমাত্র আওয়ামী লীগ। অনেকে অনেক কিছু বলেন। কিন্তু এটা কখনই উপলব্ধি করেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। আমরা আমাদের অর্থনীতির গতিটা সব সময় ঠিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যদিও করোনায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে, তার পরও হয়তো যে লক্ষ্যটা ছিল সেটা হয়তো পূরণ করতে পারিনি। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছি, যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন, যে গ্রাম থেকে উন্নয়ন করা, গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। আমরা ঠিক সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি বলেই আজ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছি, এগিয়ে যেতে পারছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সত্যিকারের গণমানুষের দল হিসেবে যদি বাংলাদেশের জন্য কেউ থেকে থাকে সেটা হচ্ছে একমাত্র আওয়ামী লীগ। আপনারা অনেকে অনেক কিছু বলেন, কিন্তু আপনারা এই জিনিসটা কখনো কেউ উপলব্ধি করেন না।

টিকা ইনস্টিটিউট করার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর : দেশে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য গবেষণা ইনস্টিটিউট তৈরির ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকার ওপর যাতে গবেষণা হয়, আমরা নিজেরাই যাতে টিকা তৈরি করতে পারি, সেজন্য ইনস্টিটিউট তৈরি করব। সে ধরনের পরিকল্পনাও নিয়েছি। করোনাভাইরাসের টিকা যখন গবেষণা পর্যায়ে ছিল, তখন টিকা পেতে প্রতিটি জায়গায় যোগাযোগ করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশই এখনো টিকা দিতে পারেনি। আমরা কিন্তু নিয়ে এসে দেওয়া শুরু করেছি। ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা আবার টিকা কেনা শুরু করেছি। তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকের কাছে করোনার টিকা যাতে পৌঁছে যায়, সে ব্যবস্থা আমরা পর্যায়ক্রমে নিচ্ছি। আমার খুব দুঃখ লাগে, যাদের আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগেভাগে টিকা দিয়েছি, দুই ডোজ নেওয়ার পর তারা এখন সমালোচনা করেন। অথচ তারাই সবার আগে নিয়েছেন। কিন্তু তারা যখন নিয়েছিলেন তখন তো এ কথা বলেননি। এখন আবার সমালোচনা কেন? বিশ্বের পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে টিকা আমরা ৪ ডলারে কিনেছিলাম, এখন তা ১৫ ডলারে কিনতে হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও বেশি দাম হবে। আমরা তো আগেই টাকা-পয়সা দিয়ে চেষ্টাটা করেছিলাম। কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। যারা সমালোচনা করেন তাদের বলব, একটু ধৈর্য ধরেন। তারপর দেখুন আমরা কতটুকু কী করতে পারি। তারপর সমালোচনা করুন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যাতে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক ও গণমানুষের দল আওয়ামী লীগকে। ভাষার অধিকার, স্বাধীনতাসহ দেশের যা কিছু অর্জন সবই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীর সহযোগিতা কামনা করে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, আইয়ুব-ইয়াহিয়া-জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচারের হাতে তৈরি বা জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল নয়। এ দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তির জন্যই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তির লক্ষ্যে যে দলের (আওয়ামী লীগ) জন্ম, সেই দলকে ধ্বংস করা যায় না, যাবেও না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষ সুখে থাকে, কল্যাণ হয়, দেশের উন্নতি হয়। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে। আওয়ামী লীগ না থাকলে দেশের মানুষ আবারও শোষিত-বঞ্চিত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে পুনরায় সরকার গঠন করে। জাতির পিতার আহ্বানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। অতি অল্প দিনের মধ্যেই বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং মাত্র সাড়ে তিন বছরেই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করে। বিদেশে থাকায় আমি এবং আমার বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যাই। ২৬ সেপ্টেম্বর দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে এ হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে। ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। মোশতাক-জিয়া চক্র খুনিদের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। তারা মার্শাল ল জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে পাকিস্তানি কায়দায় দেশ শাসন করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে।

গণভবন প্রান্ত থেকে দলের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের পরিচালনায় সভায় সূচনা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সিনিয়র নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী।

রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে সহায়তা করুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মর্যাদার সঙ্গে ও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের নিজে দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সহায়তার জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

গতকাল আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত নবম মস্কো সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড করা এ বক্তৃতা তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত নবম মস্কো সম্মেলনে সম্প্রচার করা হয়। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে ২১ জুন এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়। শেখ হাসিনা কভিড-১৯ মোকাবিলায় সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মানবিক সাহায্য প্রদান, রোহিঙ্গাদের নিজভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবাসন, সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনা সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার ওপর জোর দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি পুনরুল্লেখ করে বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, প্রায় চার বছর আগে মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হলে বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দেয়। এরা বাংলাদেশ ও গোটা অঞ্চলের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে বঞ্চনা ও শোষণ থেকে মুক্তি এবং সবার জন্য শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ সম্মেলন আয়োজন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী রুশ ফেডারেশন সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা করেন যে, এ সম্মেলন জরুরি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সাম্প্রতিক অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানাই। আমি আশা করি, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। দেশে দেশে সংঘাত আন্তদেশীয় নিরাপত্তা সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা সংজ্ঞায় এখন মানুষের সামরিক ঝুঁকি, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজন, অস্বেচ্ছাপ্রণোদিত গণঅভিযোজন, পরিবেশগত নিরাপত্তা ও অন্যান্য নতুন নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকিও অন্তর্ভুক্ত। সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’-এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, বিচ্ছিন্নতাবাদ, গণবিধ্বংসী অস্ত্র, সাইবার অপরাধ, আঞ্চলিক সংঘাত ও প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের কারণেই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ ও ইস্যুগুলো আবির্ভূত হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীকে বর্তমান সময়ে অন্যতম বৈশ্বিক ইস্যু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মহামারীর কারণে শুধু বহু মানুষই মারা যায়নি, অধিকন্তু অর্থনীতির ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ জীবিকা হারিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও বিভিন্ন খাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মহামারী মোকাবিলা করে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতিটি নাগরিককে বিনামূল্যে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসবে। তাই সরকার সম্ভাব্য সব উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার এ ভ্যাকসিনের জন্য রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আমি জানাতে চাই, বাংলাদেশের ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে এবং যদি উৎপাদনে যেতে পারি তবে বিশ্বসম্প্রদায়কে সহায়তা করতে পারব। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে আরেকটি বড় ইস্যু হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বিশ্বসম্প্রদায়ের উচিত এ ইস্যুতে যথাযথ মনোযোগী হওয়া।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। যদিও বাংলাদেশ এই মারাত্মক প্রাকৃতিক সংকটের জন্য একেবারেই দায়ী নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবগুলো সমাধানে একটি বড় ধরনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন এ ফোরাম আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদারে সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর সমাধান বের করার ওপর গুরুত্ব দেবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। তিনি তাঁর সারা জীবন মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রবর্তিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এ পররাষ্ট্রনীতির আলোকেই চলছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব ধরনের আন্তর্জাতিক বিবাদ মীমাংসায় বিশ্বাস করে। কারণ, যুদ্ধ-সংঘাতে প্রিয়জন হারানোর বেদনা বাংলাদেশ বোঝে। ১৯৭১ সালে দেশটির মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে তাঁর দেশের সর্বাধিক সদস্য রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীনতার পরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি পুর্নগঠনে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও দেশটির জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।

সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্মূল ও উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারে আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন : মহামারী করোনা মোকাবিলা, সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্মূল এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের মধ্যে গতকাল উদ্যাপিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। করোনার কারণে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান না করলেও সীমিত পরিসরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গরিব-দুঃখীদের মাঝে খাবার বিতরণের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় দিনটি। সারা দেশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর মহান নেতার স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রী স্থান ত্যাগ করার পর সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আবদুস সোবহান গোলাপ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, ফরিদুন্নাহার লাইলী, মেহের আফরোজ চুমকি, দেলোয়ার হোসেন, সায়েম খান, আমিরুল আলম মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। নেতা-কর্মীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, শুভ শুভ শুভ দিন আওয়ামী লীগের জন্মদিন’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। তারা করোনা মহামারীতে জনগণের পাশে থাকার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্মূলের অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে দলে যাতে অনুপ্রবেশকারীরা জায়গা না পায় সেদিকে নজর দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিকালে গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সূচনা বক্তব্য দেন।

ধানমন্ডিতে শেখ ফজলে শামস পরশ ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে আওয়ামী যুবলীগ, নির্মল রঞ্জন গুহ ও আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, নাজমা আকতার ও অপু উকিলের নেতৃত্বে যুব মহিলা লীগ, সাফিয়া খাতুন ও মাহমুদা বেগম ক্রিকের নেতৃত্বে মহিলা আওয়ামী লীগ, সমির চন্দ ও উম্মে কুলসুম স্মৃতির নেতৃত্বে কৃষক লীগ, আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ছাত্রলীগসহ জাতীয় শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ এবং বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়া যুবলীগ ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির পক্ষে আবদুল হাই ও সফিকুল বাহার মজুমদারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা ও স্যালুট প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা : দলের ৭২তম প্রতিষ্ঠাতাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, আনিসুর রহমান, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন শ্রদ্ধা অর্পণ করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর