রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

অটিজম শিশুদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অটিজম শিশুদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অটিজম আক্রান্ত শিশুরা যেন সমাজের মূলধারায় আর দশজন মানুষের মতো নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ শিশুদের লুক্কায়িত সুপ্ত প্রতিভা বের করে আনতে হবে, প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে।

গতকাল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের স্থায়ী আবাসন ও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার। কেউ যেন তাদের বাবা-মার জন্য বোঝা মনে না করে। অটিজম আক্রান্ত শিশুর প্রতি সদয় দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আলাদা কোনো ব্যক্তি নয়। তাদের আপন করে নিতে হবে। যারা একটু কম অসুস্থ তাদের সাধারণ স্কুলে নিয়ে গেলে তারা স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পাবে। অন্য শিশুদের সঙ্গে তারা শেয়ার করতে পারবে। সেখানে তারা বন্ধুত্ব করুক, মারামারি করুক, একসময় তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে। এভাবেই তারা অনেকটা ভালো হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অটিজম আক্রান্ত শিশুর দেখভাল, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য মা-বাবা, শিক্ষক ও সেবকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অটিস্টিক শিশুদের জন্য সরকার ‘বলতে চাই’ ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামক দুটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। এ ছাড়া এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় চলতি বছর ১৪ উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি প্রত্যেক বাবা-মা ভাবেন, আমরা যদি না থাকি সন্তানদের কী হবে। সে চিন্তাও আমাদের আছে। এজন্য আমাদের একটা উদ্যোগ আছে, আমি মনে করি, আমরা যে ট্রাস্ট গঠন করেছি সে ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা এমন একটা ব্যবস্থা করে ফেলি, যেখানে হয়তো যখন কোনো গার্ডিয়ান থাকবে না, দেখাশোনার কেউ থাকবে না, তখন সেখানে তারা বসবাস করতে পারে, তারা থাকতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ট্রাস্টকে ১৪৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছি। এ ট্রাস্ট থেকে ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০১ জনকে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টের মাধ্যমে তাদের জন্য এ ধরনের হোস্টেল বা ডরমেটরি আমরা তৈরি করে দিতে পারি, যেখানে তারা থাকবে। যেখানে তাদের সুরক্ষা বা দেখাশোনার জন্য লোক থাকবে। আর সেখানে যারা আপনারা বিত্তশালী আছেন ডোনেশনও দিতে পারবেন। যার মাধ্যমে ওটা চলবে। আর সরকারের পক্ষ থেকে অন্তত আমি যতক্ষণ আছি বলতে পারি, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করব।’ এ প্রকল্পকে শুধু ঢাকায় আটকে না রেখে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এটা বাস্তবতা যে বাবা-মা না থাকলে তাদের কে দেখবে? সবাই তো আন্তরিকতার সঙ্গে দেখে না। আর কিছু কিছু মানুষ এত স্বার্থপর হয়ে যায়, নিজের বাবা-মাকে দেখে না। সম্পত্তি নিয়ে মারামারি করে। সে ক্ষেত্রে এই শিশুদের কে দেখবে, সেজন্যই মনে হয় এ ধরনের একটা ব্যবস্থা করব। আমার চিন্তাভাবনা আছে। অবশ্যই আমরা করব।’

 তিনি বলেন, ‘আমি সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে বলব এর ওপর একটি প্রজেক্ট নিয়ে আসতে। এখন আমাদের আটটি বিভাগ আছে। প্রতিটি বিভাগে করে দেব। পর্যায়ক্রমে প্রতি জেলায় আমরা করে দেব। আমি আবারও বলছি যে ট্রাস্টের মাধ্যমে এ ধরনের আবাসনব্যবস্থা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, যাতে আমাদের প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক যারা, তারা যেন পায়, সে ব্যবস্থাটা আমি করে দেব।’ তিনি বলেন, ‘আমি যতক্ষণ আছি, আমি সব ধরনের সহযোগিতা করে যাব। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিসহ কেউ পিছিয়ে থাকবে না।’ সমাজের সবার জন্য কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে সমাজে যারা অনগ্রসর বা অবহেলিত পড়ে আছে, তারাও সমাজের একটি অঙ্গ। তাদের যে কর্মদক্ষতা আছে, তাদেরও যে মেধা আছে, সেটা বিকাশের সুযোগ আমরা সব সময় করে দিচ্ছি। যারা প্রতিবন্ধিতা বা অটিজমে আক্রান্ত তাদের দিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘অটিজমসহ অন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উন্নত আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি ও পরিচর্যায় নতুন বিষয়বস্তু প্রবর্তনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের যে কোনো পদ্ধতি বা টুলস বা কেয়ার গিভিং ওয়ে বা অ্যাপ কী করে অনুসরণ করা যায় বা কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাব। যে কোনো প্রয়োজনে আপনাদের সবার পাশে আছি।’ প্রতিবন্ধিতা ও অটিজমে আক্রান্তদের অবহেলা না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরা আমাদের আপনজন। তাদের দেখা, তাদের যত্ন নেওয়া, অটিজম বা প্রতিবন্ধিতায় যারা ভুগছেন তাদের যত্ন নেওয়া, এটা সব সুস্থ মানুষের দায়িত্ব¡-কর্তব্য। কেউ যেন এদের অবহেলা না করে। আমরা ছোটবেলা থেকে শিখেছি, কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না। এটা যেন সব শিশু ছোটবেলা থেকেই শেখে। কাজেই সেদিকটায় সবার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য। সবাই সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছি।’ এ ক্ষেত্রে নিজের কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের ভূমিকার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজ-অর্ডার অ্যান্ড অটিজম বিষয়ে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দেশ-বিদেশে অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত আসলে তার কাছ থেকেই এটা শিখেছি এবং জেনেছি। যখন সে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করত, তখন আমি যেতাম, সে সময় থেকে এ সম্পর্কে যা কিছু ধারণা পাই।’ এর আগে নীল বাতি প্রজ্বালন করে দিনের শুভ সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। অটিজম সচেতনতায় কাজ করেছেন এমন সফল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় সম্মাননা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার হাতে সম্মাননা তুলে দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। ‘বলতে চাই’ ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ অ্যাপ উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামক অ্যাপ চালু হচ্ছে। আর ‘বলতে চাই’ নামক আরও একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যা মোবাইল বা ট্যাবের মাধ্যমে ব্যবহার-উপযোগী করে অমৌখিক যোগাযোগ অর্থাৎ ফর নন-ভারবাল পারসন, যারা কথা বলতে সক্ষম নয় তারা এটা ব্যবহার করতে পারবেন এবং তারা এর সুফল পাবেন।

সর্বশেষ খবর