মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

একদিকে প্রাচীর নির্মাণ অন্যদিকে সমাবেশ

♦ থানার জন্য বিকল্প খোঁজার নির্দেশ ♦ প্রতিবাদ করলেই গ্রেফতার কেন প্রশ্ন ১৯ বিশিষ্ট নাগরিকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানীয়দের দাবি উপেক্ষা করেই চলছে রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা খেলার মাঠে থানা ভবন নির্মাণের কাজ। অন্যদিকে ‘তেঁতুলতলা মাঠে থানা নয়’ দাবিতে চলছে প্রতিবাদী নাগরিক সমাবেশ।

গতকাল  বিকাল ৩টা থেকে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ব্লাস্ট, গ্রিন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, থানার ভবন নির্মাণে বিকল্প স্থানের  খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, খেলার মাঠকে কখনই থানা হতে দেওয়া হবে না। এ মাঠে শিশুরা খেলা করে, ঈদের জামাত হয়, কেউ মারা গেলে জানাজা হয়। এ মাঠটি এলাকাবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ- এ মাঠে যেন থানা ভবন না হয়। বেলার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পুলিশ যা করেছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধানবহির্ভূত। আপনাদের কাজ মানুষকে ভীতি থেকে সুরক্ষা দেওয়া। সেখানে আপনারা উল্টো ভীতি দেখিয়েছেন। সরকারি কাজের নামে একজন নারীকে ধরে নেওয়া বেআইনি কাজ। আমরা পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে এই মাঠ থাকবে এলাকাবাসীর।’ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নিজেরা করি’র খুশি কবীর, স্থপতি ইকবাল হাবিব ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন প্রমুখ। এ ছাড়া গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে সংবাদ সম্মেলন করে এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রিন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি। সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ?রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা নয়- শিশুদের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। মাঠ রক্ষায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি মাঠের দাবিতে আন্দোলকারী মা-ছেলেকে আটকে রাখা ও হয়রানির নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে। লিখিত বক্তব্যে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, তেঁতুলতলা মাঠে কলাবাগান পুলিশের থানা ভবন নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ করায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সংগীত বিভাগের কর্মী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ইসা আবদুল্লাহ সাদেকিন পিয়াংসুকে কলাবাগান থানায় আটকে রাখা হয়। পরে মধ্যরাতে কলাবাগান থানা পুলিশ মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। তাদের আটকের বিষয়ে পুলিশ নির্দিষ্ট করে কোনো কথা বলেনি। তাদের কাউকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। সারা দিন একজন নারী ও তার ১৭ বছরের ছেলেকে আটকে রেখেছে- এটা আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের থানায় ঢুকতে দেয়নি। ভারপ্রাপ্ত ও সেকেন্ড অফিসার সারা দিন থানায় ছিলেন না, ফোন ধরেননি। ৫০ বছর ধরে ব্যবহার করা এলাকাবাসীর একমাত্র মাঠের জায়গায় কোনোভাবে থানা ভবন নির্মাণ করা যাবে না। এখানে এলাকার ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করবে। ঈদের জামাত হবে। সকালে এলাকাবাসী হাঁটবে। আমরা জেনেছি, ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মাঠকে থানা বানানোর অনুমতি দিয়েছে। আমরা এই আদেশের তীব্র নিন্দা জানাই। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, জনগণ পুলিশের বন্ধু। আমি মনে করি এই মাঠ সংরক্ষণে পুলিশকেই সবার আগে আন্দোলনে নামা দরকার। এটা থানা হতে পারে না। কারণ, এই এলাকার জনগণের খেলার মাঠ এটা।

প্রতিবাদ করলেই গ্রেফতার কেন : কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্বদাতা সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রাখার কঠোর সমালোচনা করে গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলেন, এভাবে মত প্রকাশে বাধা দেশকে স্থবির করে দিচ্ছে।

তেঁতুলতলা মাঠ শিশু-কিশোরদের খেলার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। বিবৃতিদাতারা হলেন- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, সারওয়ার আলী, আবেদ খান, সেলিনা হোসেন, আবদুস সেলিম, লায়লা হাসান, মফিদুল হক, মামুনুর রশীদ, শফি আহমেদ, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সারা যাকের, শিমূল ইউসুফ ও হারুন হাবীব। বিবৃতিতে বলা হয়েছে- জনমতের চাপে ২৫ এপ্রিল মধ্যরাতে মা-ছেলেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, কেন কোনো ধরনের প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রতিবাদকারীকে এ দেশে গ্রেফতার হতে হয়। এভাবে মত প্রকাশে বাধা দেশকে স্থবির করে দিচ্ছে। সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলের কাছ থেকে যে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বিবৃতিতে তাঁরা আরও বলেছেন- পুলিশ সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলেকে খেলার মাঠ দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে সরে আসবেন- এ রকম মুচলেকায় ন্যক্কারজনকভাবে স্বাক্ষর নিয়ে তাঁদের মুক্তি দিয়েছে বলে আমরা গণমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি। আমরা এ হীন মুচলেকার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও একই সঙ্গে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। আমরা কলাবাগান তেঁতুলতলা খেলার মাঠ হিসেবেই দেখতে চাই। কলাবাগান থানা ভবনের জন্য অন্য কোনো জায়গা খুঁজে ভবন নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর