শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া ঠিক না

----------- প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া ঠিক না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেছেন, যার যার ধর্ম সে পালন করবে এবং আমরা সেই চেতনায় বিশ্বাস করি। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কোনো কথা বলা ঠিক না। ধর্ম হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস। গতকাল বিকালে শুভ ‘জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষে শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। প্র্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং চট্টগ্রাম জে এম সেন হল প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ এই বিশ্বটা সৃষ্টি করেছেন, অবশ্যই এটি বিশ্বাস করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ যাই থাকুক না কেন কার মধ্যে কী শক্তি আছে, সেটি আমরা জানি না। সৃষ্টিকর্তাই জানেন। তিনি বলেন, আপনারা কখনো নিজেদের ধর্ম পালন করতে গিয়ে ছোট মনে করবেন না। আপনারা এ দেশের সন্তান, এ দেশের নাগরিক। সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়টি আমাদের দেশের একশ্রেণির মানুষ কোনো দিনই মেনে নিতে পারেনি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ সবসময় সেই জাতির পিতার সেই চেতনায় বিশ্বাস করে। এখানে সব ধর্মের সমান অধিকার থাকবে। আমাদের স্লোগান হলো- ধর্ম  যার যার উৎসব সবার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখানে একটি ব্যতিক্রমধর্মী দেশ। এখানে উৎসবে সবাই সমবেত হয়। সেই উৎসব উদযাপন করে। সেটা আমাদের ঈদের    সময় সবাই যেমন একসঙ্গে মিলিত হই, আবার যে কোনো পূজা বা যিশুখ্রিস্টের জন্ম বা যে কোনো অনুষ্ঠানেই আমরা সবাই কিন্তু সমানভাবে থাকি। তিনি বলেন, যখনই কোনো ঘটনা ঘটে, আমাদের পক্ষ থেকে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে একটা জিনিস আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি, যখন কোনো একটা ঘটনা ঘটল, ঘটনাকে দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমনভাবে প্রচার করা হয় মনে হয় যেন এদেশে হিন্দুদের কোনো অধিকারই নেই। কিন্তু ঘটনার পরে অ্যাকশনগুলো, তারা যেই হোক, তাকে গ্রেফতার করি, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই, সেই বিষয়টা কিন্তু তুলে ধরা হয় না। প্রচারটা করা হয় এই দেশে হিন্দুরা বুঝি ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছে। আশির দশকে, নব্বরই দশকে সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের ওপর আঘাত নেমে আসে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।  আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তখন কিন্তু প্রত্যেক ধর্মের মানুষের ওপর আঘাত এসেছে। অর্থাৎ যারা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে, ধর্মীয় নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে তাদের ওপরই কিন্তু আঘাত এসেছে। তখন মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছে। আমরা মানব ধর্মেই বিশ্বাস করি। শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু তাই চেয়েছিলেন, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন। এটিই ছিল তার লক্ষ্য। তিনিও কিন্তু এই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করতেন। মহানবী (সা.) সবসময় সব ধর্মের সমান অধিকারের কথা বলেছেন এবং তিনি তা বিশ্বাস করতেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশ। এই দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সেই নীতি নিয়েই আমরা প্রতিটি গৃহহীন মানুষকে ঘর বানিয়ে দিচ্ছি। জীবন-জীবিকার জন্য নগদ অর্থ দিচ্ছি। ট্রেনিং দিচ্ছি এবং তাদের সব ধরনের সুবিধা করে দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, সেটি আমরা কোনো সম্প্রদায় ভিত্তিতে করছি না। সবার জন্য করছি, সর্বজনীনভাবে করছি। অর্থাৎ মানবতা প্রেম, মানবতার জন্য কাজ করা, মানবতার উন্নতি করা- এটাই আমাদের লক্ষ্য। এটিই আমরা বিশ্বাস করি। আর সেই বিশ্বাস নিয়ে চলি। কাজেই আমরা এখানে চাই যে, আমাদের সব ধর্মের মানুষ অধিকার নিয়ে সমানভাবে বসবাস করবে।  সনাতন সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেন, এই মাটিতে আপনাদের সবার অধিকার। আমারও যতটুকু অধিকার, আপনাদেরও সেই অধিকার। দেশের মাটিতে সবার সমান অধিকার আছে। কাজেই কখনো নিজেদের সংখ্যালঘু বা ওইরকম মনে করবেন কেন?  প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা মনে করবেন আপনারা এই দেশেরই নাগরিক। সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং আমরা সেভাবেই আপনাদের দেখতে চাই। কখনো নিজের ভিতরে এই হীনমন্যতা আনবেন না। নিজেদের আলাদা কিছু ভাববেন না। ভাববেন, এই দেশের আপনারা নাগরিক, মালিক আমরা সবাই। কাজেই নাগরিক হিসেবে আমাদের সমান অধিকার থাকবে।  শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। একদিকে দুই বছরে করোনার যে ধাক্কাটা সারা বিশ্বে অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে, তার ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা ইউক্রেন আর রাশিয়া যুদ্ধ। স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন। ফলে আজকে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। আজকে ইউরোপ, ইংল্যান্ডে ইনফ্লাশন দেখলাম ১০ দশমিক এক ভাগে উঠেছে। প্রতিটি দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আমাদের যেসব জিনিস আমদানি করতে হয় তার দামও যেমন বেড়েছে, পরিবহন খরচও বেড়েছে। কাজেই আমাদের কিছু কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে। আমি জানি আমাদের তেলের দাম বাড়িয়েছি। ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। যেটি স্বাভাবিকভাবে বাড়ার কথা, কেউ আবার একটু অধিক মুনাফার জন্য কিছু অতিরঞ্জিত করছে। কাজেই আমরা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করছি, খোঁজখবর নিচ্ছ।  বিত্তশালীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ আরাম-আয়েশে থাকবে আর কেউ কষ্ট পাবে তা তো হবে না। সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে এবং যারা বিত্তবান তাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিম্নবিত্তদের প্রতি নজর দেওয়া। তাদের পাশে দাঁড়ানো।  অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মণীন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর