বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

মানুষের জীবন সচল রাখার ব্যবস্থা নিচ্ছি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সমাপনী ভাষণে সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে এই মুহূর্তে ১৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ আছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে যেসব ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়, যত টাকাই লাগুক আমরা কিন্তু তা আমদানি করছি। টাকা পয়সার দিকে তাকাচ্ছি না। মানুষের যাতে খাদ্য নিরাপত্তা থাকে, মানুষের জীবন যাতে সচল থাকে সে ব্যবস্থা আমরা নিতে পারছি। এত কিছুর পরও প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২১তম অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে সংসদনেতা রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর সফল কর্মময় জীবনের প্রশংসা করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য হিসেবে, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ জানান। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবটি সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আলোচনায় আরও অংশ নেন, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে উন্নতশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ দেব বলেছিলাম, দিয়েছি। আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন দেশে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আমরা কৃষিতে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি। শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে এখন অর্থনৈতিক মন্দা, বাংলাদেশও বিচ্ছিন্ন নয়। আমরা কিন্তু সে অবস্থায়ও, এত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে, বিশ্বে যেখানে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, সেখানে আমরা যেখানেই যা পাচ্ছি, আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেশে উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদেশ থেকে যেসব ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়, যত টাকাই লাগুক, আমরা কিন্তু তা আমদানি করছি। এর সঙ্গে আমাদের জ্বালানি তেল, গ্যাস, চিনি, গম ভুট্টা- এগুলো সবই আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা কিন্তু টাকা পয়সার দিকে তাকাচ্ছি না, মানুষের যাতে খাদ্য নিরাপত্তা থাকে, মানুষের জীবন যাতে সচল থাকে সে ব্যবস্থা আমরা নিতে পারছি। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল তা কিছুটা এখন কমেছে যেটা একটা ভালো লক্ষণ আমরা মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা যথেষ্ট দক্ষ এখন সে ব্যবস্থাও নিয়েছি। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কাউকে আমরা বাদ দিচ্ছি না। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তিনি প্রশ্ন করেন, আগে নির্বাচন কি ছিল? আমরা জিয়ার আমলেও নির্বাচন দেখেছি। হ্যাঁ, না ভোট অথবা রাষ্ট্রপতি ভোট- সবই দেখেছি। ইয়েস, নোয়ে, নোর বাক্স পাওয়া যায় না। সবই ইয়েস। তিনি বলেন, ৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আমাদের দেখা আছে, কীভাবে কারচুপি হয়! ৮৬ সালের নির্বাচন আমরাই অংশ গ্রহণ করেছিলাম। ৪৮ ঘণ্টা সেই নির্বাচনের ফলাফল বন্ধ রেখে, জেনারেল এরশাদ সাহেব নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করা- সেটাও আমরা দেখেছি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপি সরকারে এসেছিল। এসেই সে কী করল? ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে নির্বাচন ভোটারবিহীন করে দিল। তিনি বলেন, তবে ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হলো। ৩০ মার্চ অর্থাৎ দেড় মাসের মাথায় তার বিদায় হলো। আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে চক্রান্ত ছিল গ্যাস বিক্রি নিয়ে। বিএনপি ক্ষমতায় এসেই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, লুটপাট শুরু করে। দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করল সেখানে জরুরি অবস্থা। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করে আজ আমরা উন্নয়নের গতিধারা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, মাত্র কদিন আগে ছয়টি উপনির্বাচন হলো, একটি জাতীয় পার্টি, একটি বিএনপির একজন সংসদ সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি আজ সংসদে এসেছেন। একটা দিয়েছিলাম রাশেদ খান মেননকে সেখানে জাতীয় পার্টি জিতেছে। আরেকটা দিয়েছিলাম হাসানুল হক ইনুকে সেটা জিতে এসেছে। তাছাড়া বগুড়ায় এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জের দুই সিটে নৌকা মার্কা জয়লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপর রংপুর মেয়র নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ অভিযোগ করতে পারেনি। সে নির্বাচনে কিন্তু জাতীয় পার্টি জয় লাভ করেছে, আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। কাজেই নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু হয়, অবাধ, নিরপেক্ষ হয় সেটাই কিন্তু এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, এর পরে নির্বাচন নিয়ে আর কেউ কোনো কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না।

 

সর্বশেষ খবর