লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরের বিরুদ্ধে মানহানি মামলায় হেরে যাওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনকে ১ লাখ ৫৪ হাজার পাউন্ড, বাংলা টাকায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছিল। গত জুলাই মাসে রয়েল কোর্ট অব জাস্টিসের কিংস বেঞ্চ থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়। রায়ে উল্লিখিত অর্থ পরিশোধের সয়মসীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বিচারক। কিন্তু ওই নির্ধারিত সময়ের পর এখন পর্যন্ত খোকন কোনো অর্থ পরিশোধ করেননি বলে জানিয়েছেন জাওয়াদ নির্ঝরের আইনজীবী উশরাত সুলতানা। আদালতের নথি থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর অনুসন্ধানী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরের বিরুদ্ধে ‘গুজব খোকন’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করায় মানহানির অভিযোগ এনে যুক্তরাজ্যের আদালতে ৫০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছিলেন আশরাফুল আলম খোকন। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানি শেষে সব সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে খোকনের আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা খারিজ করে দেন যুক্তরাজ্যের হাই কোর্ট। একই সঙ্গে আদালত এ মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে জাওয়াদ নির্ঝরের খরচ বাবদ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬০২ পাউন্ড ০৫ পেন্স প্রদান করার নির্দেশও দেন। আদালত বিবাদীর আইনি খরচ বাবদ পৃথক দুটি ধারায় ২০৬৪৬.৫৮ পাউন্ড ১৪ মার্চ বিকাল ৪টার মধ্যে প্রদান করার নির্দেশ দেন। কিন্তু আশরাফুল আলম খোকন ওই আদেশ অনুযায়ী অর্থ প্রদান না করে আদেশের বিরুদ্ধে আরেকটি ক্রস আবেদন করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসে ৭ জুন বাদী আশরাফুল আলম খোকনের আইনজীবী আড্রিয়ান ডেভিস ও বিবাদী জাওয়াদ নির্ঝরের আইনজীবী রাসেল উইলকক্সের শুনানির পর ১১ জুন প্রদত্ত রায়ে বাদী আশরাফুল আলম খোকনকে পূর্বের রায়ে উল্লিখিত ২০৬৪৬.৫৮ পাউন্ড ১৪ জুন বিকাল ৪টার মধ্যে বিবাদীকে প্রদানের আদেশ দেন। একই সঙ্গে বলা হয়, বাদী যদি আদেশ মানতে ব্যর্থ হন তাহলে বাদীর আবেদন পরবর্তী আদেশ ছাড়াই বাতিল বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে এ অর্থের নিরাপত্তা বাবদ ২১ জুনের মধ্যে কোর্টের কাছে ২৬ হাজার পাউন্ড জমা রাখতে বলা হয়। পাশাপাশি বাদীর ক্রস আবেদনে বিবাদীর আইনি খরচ বাবদ আরও ১২ হাজার পাউন্ড আইনি খরচ ২১ জুন বিকাল ৪টার মধ্যে প্রদান করতে বলা হয়। রায়ের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জাওয়াদ নির্ঝর বলেন, ‘আমাকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে হয়রানি করার জন্যই ব্রিটেনের আদালতে মিথ্যা মামলা করেন খোকন। ব্রিটেনে মামলা লড়া ব্যয়বহুল, তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই এখানে বসবাসরত কারও জন্য মামলা লড়া অনেক কঠিন। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ব্রিটেনের কোর্টকে বল প্রয়োগ করে রায় নিজের পক্ষে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না। খোকন মামলায় হেরে গেছেন। আমার যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সেই লিগ্যাল ফির অর্থ উদ্ধারে আমার আইনজীবীরা এরই মধ্যে আমেরিকাতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ব্রিটেনের আদালতে আর্থিক ত্নেপ্রাপ্ত খোকনের ব্যাপারে আমেরিকার আদালতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’