অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আমলে তার ভাগ্নি, ব্রিটেনের আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবার যেসব সম্পত্তি ‘উপহার’ পেয়েছেন, সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্তে এগুলো অর্জনের পেছনে ডাকাতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তা বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফেরত দিয়ে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। ড. ইউনূস বলেন, দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাৎ তদন্তের অংশ হিসেবে ব্রিটেনে টিউলিপের ব্যবহৃত লন্ডনের বাড়িগুলো নিয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। সিদ্দিকের মতো একজন দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই যখন অভিযোগের মুখে থাকেন, তা আসলে নির্মম রসিকতা হয়ে যায়। কেউ চুরি করলে তা গোপন রাখে। শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা লন্ডনে যেসব সম্পত্তি ব্যবহার করছেন, সেগুলো প্লেইন ডাকাতির ব্যাপার। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের এলিট শ্রেণি প্রতি বছর দেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। এই অর্থের একটি অংশ বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পত্তি কেনায় ব্যবহার করা হয়েছে। পাচারের টাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগীদের কেনা সম্পত্তি ফেরত আনা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান ড. ইউনূস। ড. ইউনূস বলেন, তিনি (টিউলিপ) দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হলেন, তার পর (লন্ডনের সম্পত্তি নিয়ে) নিজের পক্ষে সাফাই গাইলেন। তার তো বলা উচিত ‘দুঃখিত, তখন আমি বিষয়টি বুঝিনি, আমি জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছি এবং পদত্যাগ করছি।’ কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো নিজের পক্ষে সাফাই গাইছেন। যুক্তরাজ্যের কোনো পার্লামেন্ট সদস্য যদি এতে জড়িত থাকেন, তবে এটা অবশ্যই বড় ইস্যু। ড. ইউনূসের এমন মন্তব্যের পর যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি বাডেনকও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে টিউলিপকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক সংকট হতে পারে মন্তব্য করে এক এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সিদ্দিকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর (স্টারমার) দুর্বল নেতৃত্ব এটাই বোঝাচ্ছে যে, সততার গুরুত্ব নিয়ে তিনি মুখে যা বলেন, আদতে ততটা গুরুত্ব তিনি দেন না।’ সম্প্রতি সানডে টাইমসসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম থাকা একটি অফশোর কোম্পানি কিনেছিল, এমন একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন বাস করেছেন টিউলিপ। বাড়িটি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায়। ওই অফশোর কোম্পানির সঙ্গে দুজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার সঙ্গে যে পরমাণু শক্তি চুক্তি করেছিলেন, সেটি নিয়ে বর্তমানে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ উঠেছে, টিউলিপ ওই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন এবং এ চুক্তি থেকে লাভবান হয়েছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্রিটেনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।